২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কলাপাড়ায় জেলেপাড়াগুলোতে হাহাকার : নেই সরকারি সহায়তা সাগরে মাছ ধরা বন্ধ

-

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকার ৪০টি জেলে পাড়ায় দুই হাজার ৮০০টি জেলে পরিবারের ২৮ হাজার ৯৪০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের পরিবারের এখন হাহাকার বিরাজ করছে। গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর সরকার মা ইলিশ মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। মা ইলিশ রক্ষায় নদনদী ও সাগর মোহনায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই মা মাছ শিকারে বিরত থাকা জেলেরা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় রয়েছেন উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভার কয়েক হাজার জেলে।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় জেলে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে, উপজেলার মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহীপুর, লালুয়া, কুয়াকাটা, ধুলাসার, বাবলাতলার ঢোস, খাজুরা, ফাতরা, আন্দারমানিক ও রাবনাবাঁধ মোহনা, লালুয়া, গঙ্গামতি, ধানখালী, বাহের চর বাজার, খালখোড়া বাজার, চরমোন্তজ স্লুইস বাজার ছোটবাইশদিয়ার কোড়ালিয়ার বাজার, বড়বাইশদিয়াচরগঙ্গার বাজার ওই সব এলায় বেশি ভাগ মানুষ জেলে। এ কাজ করে তারা জীর্বিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চলায় এখন জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া গত বছর এ সময় তাদের জন্য সরকারি সহায়তা জুটলেও এ বছর তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ধুলাসার ইউনিয়নের গঙ্গামতি গ্রামের মো: আলী হোসেন খান জানান, নিষেধাজ্ঞা চলায় অবসর সময়ে বাড়িতে বসে জাল সেলাই করছেন। তিনি আরো জানান, অবরোধ নিষেধাজ্ঞা থাকায় মাছ ধরতে যাই নেই কিন্তু আমাগো তো অন্য কোনো আয় ইনকাম ও নেই। টানা ২২ দিনের অবরোধ দেখায় গতবার চাইল দাওয়া ওই ছিল। তাও অবরোধে শেষে দাওয়া ওইছে। যহন চাইল দেয়ওহন আমরা নদীতে থাহি। এবার চাইল দাওনের কোনো নাম গন্ধ নাই। ওইলে এবার কি আমাগো তোই জাইল্লাগো না খাইয়া থাকতে হবে পরিবার পরিজনকে নিয়ে।
স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে জোরপূর্বক ইলিশ মাছ শিকার করে। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার মা ইলিশ রক্ষার জন্য অবরোধ দিলে ও ভারতীয় জেলেরা তা না মেনে মা ইলিশ শিকারে এখন ব্যস্ত দিন কাটান। তারা পশুর, শিবসা, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ, কৃষ্ণা, ভাঙ্গারা নদী এবং সুন্দরবনের নারিকেলবাড়ীয়া, মান্দারবাড়ীয়া, আলোরকোল, পেয়ারওয়েবয়া এলাকায় ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করছেন। কয়েক দিন আগে জাতীয় পত্রিকায় উঠেছে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশে প্রবেশ ইলিশ শিকার করছে তা ছাপা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ২২ দিনের অবরোধ পালন করছে। নিষেধাজ্ঞা সময়ে সরকারি তেমন সাহায্য না পাওয়ায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে জেলে পরিবারগুলো। জাল, নৌকা ও ট্রলারসহ মাছ ধরার যাবতীয় সরঞ্জাম মেরামত করে কেউ কেউ সময় পার করছেন। কেউ কেউ আবার জাল বুনে অলস সময় পার করছেন।
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভা ১৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ১১ হাজার ৬৩৫ জন জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচি আওতায় ২০ কেজি করে ২৩২ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু খাদ্য গুদামে চাল না আসার কারণে জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচি আওতায় ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে কিন্তু চাল না আসা জেলেদেরকে চাল দেয়া সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে দু’টি পৌরসভা নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫ জন। ইলিশ শিকারে বিরত থাকা জেলেদের জন্য গত বছরের মতো এবারো সহায়তা দেয়ার কথা।
কলাপাড়া মৎস্য বন্দর আলীপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জানান, নিষেধাজ্ঞা চলায় এখন উপজেলার হাজার হাজার জেলে বেকার রয়েছে। এ সময়ই সহায়তা দেয়া উচিত। তা হলে জেলেরা সুফল ভোগ করতেন এবং মা ইলিশ রক্ষা পেত। কিন্তু এখনো সহায়তার কোনো খোঁজখবর নেই। এবার সহায়তা দেয়া হবে কি না, তাও নিশ্চিত না।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জানান, এরই মধ্যে মা ইলিশ শিকারে বিরত থাকা জেলেদের সহায়তা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলা চাল না আসার কারণে বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি। কিছু দিনের মধ্যে চাল এলেই জেলেদের সহায়তা করা হবে। আমার এলাকায় কোনো জেলে সাগরে ইলিশ মাছ ধরতে না পারে এ জন্য কোস্টগার্ড ও এইচডিবি বলেশ্বর টহল রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement