২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেরপুর পৌরসভায় সড়কের ওপরেই ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

শেরপুর পৌরসভার ভাগাড়টি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়ার পর এখন সড়কের ওপরেই ফেলা হচ্ছে বর্জ্য হনয়া দিগন্ত -

দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে শেরপুর পৌরসভার সব আবর্জনা ও বর্জ্য ফেলা হচ্ছে শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশের ‘আমনকূড়া’ বিলে। ফলে দিন দিন বিলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দৃষ্টিকটু বিধায় আবর্জনার ভাগাড়টিকে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়ায় এখন সড়কের ওপরেই ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকাবাসী ও পথচারীদের দুর্ভোগ আগের চেয়ে আরো বেড়েছে।
পৌরসভার বর্জ্য সংরক্ষণ (কনসারভ্যান্সি) বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা আবর্জনা ও বর্জ্য পৌরসভার ট্রাক ও ভ্রাম্যমাণ ভ্যান দিয়ে সংগ্রহ করে তা শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে গৃদানারায়ণপুর এলাকার আমনকূড়া বিলে ফেলা হয়। এই বিলটি শহরের পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে শহরের বর্জ্য ফেলায় ক্রমান্বয়ে বিলটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে এবং পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় গৃদানারায়ণপুর, নবীনগর, চকপাঠক, রাজবল্লভপুর, মাধবপুর এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হন। সেইসাথে বর্জ্যরে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে বিলের আশপাশের বাড়িঘরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পথচারীরা দুর্ভোগে পড়েন।
এলাকাবাসী জানান, পৌরসভার ময়লা-আবর্জনাবাহী ট্রাকে করে প্রায় প্রতিদিন পৌর শহরের গৃদানারায়ণপুর এলাকায় শেরপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশের আমনকূড়া বিলে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে বিলের বেশির ভাগ অংশ বর্জ্যে ভরাট হয়ে বিশাল ‘ভাগারের’ সৃষ্টি হয়েছে। ভাগারটি টিনের বেড়া দিয়ে ঢেকে দেয়ায় এখন রাস্তার ওপরেই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সারা দিন ধরে গবাদিপশু ফেলে রাখা ওই বর্জ্য থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খাচ্ছে। কিছু নারী, শিশু ও পুরুষ ওই বর্জ্য থেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে থাকে। এতে করে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। পশুর বিচরণ ও বর্জ্য দিয়ে রাস্তার অনেকটা দখলে থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
শেরপুরের জেলা ও দায়রা জজ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবন, পৌর পার্ক, পৌর ক্লাব, টেনিস ক্লাব, পৌর হকার্স মার্কেট, কয়েকটি ব্যবসায়প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি আমনকূড়া বিল সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত।
বিলসংলগ্ন পৌর হকার্স মার্কেটের হোটেল ব্যবসায়ী আবদুুল মমিন জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে তিনি এখানে হোটেল দিয়েছেন। নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী মানুষ হোটেলে খেতে আসেন। কিন্তু ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অনেকে না খেয়েই চলে যান। বর্জ্য ফেলার কারণে এখানকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। পৌরসভার লোকজন ময়লা-আবর্জনা নিয়ে এলে এখানে ফেলতে নিষেধ করলেও তারা কোনো কথা শোনেন না। এ ব্যাপারে একাধিকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি বলে তিনি জানান।
পৌর হকার্স মার্কেটের মনিহারি ব্যবসায়ী চান মিয়া বলেন, বর্জ্যরে দুর্গন্ধে আমাদের ব্যবসা করতে অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে যখন এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়, তখন আবর্জনার পচা পানি সড়কের ওপর এসে পড়ে এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধে থাকা দায় হয়ে যায়।
গৃদানারায়ণপুর এলাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক শাহজাহান আলী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে সারা দিনই দুর্গন্ধ আসে। ময়লার কারণে মাছি এসে পরিবেশ নষ্ট করে। গৃদানারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান, শিমুল হক, রতন চক্রবর্তী এবং নবীনগরের বাসিন্দা বাবুল মিয়া ও সৈয়দ আবুল কালাম আযাদ প্রায় অভিন্ন ভাষায় বলেন, ‘শেরপুরের প্রবেশদ্বারে এই ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে আমাদের বসবাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মাঝে-মধ্যে এমন দুর্গন্ধ বের হয় যে, এখানে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমরা বিভিন্ন সময়ে এখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে দিনের পর দিন এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেই যাচ্ছেন। এতে এলাকাবাসীর খুবই ভোগান্তি হচ্ছে।’
শেরপুরের স্বেচ্ছাসেবী প্রকৃতি ও পরিবেশবাদী সংগঠন শাইনের সাংগঠনিক সম্পাদক রুমি আক্তার লিলি বলেন, সড়কের পাশে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমনকূড়া বিলে শহরের বর্জ্য ফেলা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এর ফলে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে এবং পানি নিষ্কাশনেও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আমনকূড়া বিলে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে শহরের বাইরের কোনো স্থানে ফেলার অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি পৌর কর্র্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, শহরের বর্জ্য অপসারণের জন্য শেরপুর পৌরসভার কোনো ‘ডাম্পিং স্টেশন’ (বর্জ্য ফেলার কেন্দ্র) না থাকায় অস্থায়ীভাবে আমনকূড়া বিলে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীর কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে নগর পরিচালন ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শহরের বাইরে একটি আধুনিক ‘ডাম্পিং স্টেশন’ স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ করে কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজ শেষ হলেই এলাকাবাসীর দুর্ভোগ কমবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ

সকল