এক যুগ ধরে শিকলে বন্দী আসলাম
- কাজী আনিছুর রহমান রানীনগর (নওগাঁ)
- ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
নওগাঁর রানীনগরে প্রায় এক যুগ ধরে খেজুরগাছের সাথে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন আসলাম সাকিদারকে (৩৮)। যে বয়সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহের কথা সে বয়সে বন্দী জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। আসলাম রানীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের মুনি সাকিদারের ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় হঠাৎ করেই আসলামের মানসিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তার পরিবার চিকিৎসার জন্য এলাকার বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের দ্বারস্থ হয়। এতে শুধু টাকার অপচয় হলেও কোনো কাজ না হওয়ায় দিন দিন তার অত্যাচার বেড়ে যায়। অনেকসময় সে লোকজনকে মারধর করত। ফলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে আসলামের হাত-পায়ে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদরের কথিত মানসিক ডাক্তারের দ্বারস্থ হলে সেখানে রেখে প্রায় তিন বছর চিকিৎসা অন্তে আসলাম কিছুটা সুস্থ হয়। এর পর তাকে পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে আসে। সে অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে শুরু করলে বছরখানেক পরে আসলামকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর তাদের ঘরে এক পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। এর কিছু দিন পরই ঠিক আগের মতো ধীরে ধীরে সে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে যায়। দরিদ্র বাবা আর্থিক অনটনের কারণে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে না পারায় উন্মাদনা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তখন তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে আসলাম ছোট। আসলামকে রাতে বাড়ির বারান্দায় এবং সকাল থেকে বাড়ির পাশে খেজুরগাছের সাথে পায়ে শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হয়। সেখানেই সারা দিনের খাবার দেয়া হয়। এভাবেই চলছে প্রায় এক যুগ। পরিচিত জনেরা তাকে দেখতে গেলে অনেকসময় সুন্দর করে কথা বলে আসলাম। ‘ভাই হামাক একটা বিড়ি দে। হামার জন্য বিড়ি আনিচু। তাড়াতাড়ি দে বিড়ি খামু!’
স্থানীয়রা বলেন, অর্থাভাবে উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে না পারায় বন্দিজীবন কাটাতে হচ্ছে আসলামকে।
আসলামের বৃদ্ধ বাবা মুনি সাকিদার ও বড় ভাই মেছের আলী জানান, আসলামকে সুস্থ করতে পারিবারিকভাবে তারা সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন; কিন্তু তাকে ভালো করতে পারেননি। তাকে উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী ছেলেকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে গেছে। নিরুপায় হয়ে চোখের সামনেই আসলামের করুণ জীবন তাদেরকে দেখতে হচ্ছে।
রানীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কে এইচ এম ইফতেখারুল আলম খান বলেন, দেশে এই ধরনের রোগীদের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ করে পাবনা মানসিক হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, সমম্প্রতি ভবানীপুর থেকে একজনকে উদ্ধার করে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়েছি। আসলামের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে সুচিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা