২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বাগমারায় বিদ্যুৎ সংযোগের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও

-

রাজশাহীর বাগমারার বিভিন্ন গ্রামে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার নামে ব্যাপকভাবে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগের নামে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে। এসব ঘটনায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে থানা ও আদালতে মামলাও হয়েছে একাধিক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সদর কার্যালয় ও বাগমারা জোনাল কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে দালালদের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে গ্রাহকদের কাছে চাঁদা আদায় করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এ বিষয়ে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিক অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
উপজেলার ঝিকরা ইউনিয়নের ঝিকরা গ্রামের হাসেম আলী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল ঝিকরা গ্রামের রহিদুল ইসলাম আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। টাকা না দেয়ার আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমার বাড়ির সীমানার দূরত্বের বাইরে পোল স্থাপন করায় আমি বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এ বিষয়ে নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ও ঠিকাদারকে টাকা দিলে তাড়াতাড়ি কাজ হয়; না দিলে হয় না। তাই গ্রাহকদের কাছে থেকে সামান্য কিছু টাকা নেয়া হয়।
এ দিকে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঝিকরা ইউনিয়নের মরুগ্রাম ডাঙ্গাপাড়ায় নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিসের অধীনে ২০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য সরকারিভাবে লাইন নির্মাণপূর্বক ২০০টি মিটার বরাদ্দ হয়। তবে সরকারিভাবে সংযোগের কাজ শুরু হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ গ্রাহকদের কাছে থেকে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। কয়েজন গ্রাহক চাঁদার টাকা না দেয়ায় তাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়। গত বুধবার ওই গ্রামে পোল স্থাপন শুরু হলে চাঁদার টাকা না দেয়া গ্রাহকদের বাড়ির সীমানার দূরত্বের বাইরে পোল স্থাপন করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা নজরুল ইসলাম ও মুনছুর রহমানের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং দুই গ্রুপের লোকজন মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন গুরুতর আহত হন।
বাগমারা থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অন্য দিকে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের পারদামনাশ গ্রামের ছেকেন্দার আলী ও মজিবর রহমান বলেন, গত অর্থবছরে দামনাশ, পারদামনাশ ও দেওপাড়া গ্রামের ১২৫ জন গ্রাহকের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে সরকারিভাবে ১৭টি পোল পাঠানো হয়। পোল পৌঁছার পর বিদ্যুৎ অফিসের এক দালাল পারদামনাশ গ্রামের প্রভাবশালী মন্টু রহমান জানান, নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তাকে গ্রাহক প্রতি ৮ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলে দিতে হবে। টাকা না দিলে লাইন নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে তার কথায় বিশ্বাস করে ১২৫ জন গ্রাহক প্রত্যেকে ৮ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলে মোট ১০ লাখ টাকা মন্টু রহমানকে দেই। কিন্তু মন্টু রহমান পল্লীবিদ্যুতের লাইন নির্মাণকাজের এক তদারককারীকে মাত্র এক লাখ ২৫ হাজার টাকা জমা দেন। অবশিষ্ট টাকা নিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট অফিসে অভিযোগও দিয়েছি কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।
এ ছাড়া বাসুপাড়া ইউনিয়নের সাঁইপাড়া, হলুদঘর ও মন্দিয়াল গ্রামের ৫০০ জন গ্রাহকের বাড়িতে সম্প্রতি সংযোগ দেয়ার নামে এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি সাত হাজার টাকা করে চাঁদা তুলতে শুরু করেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তবে সাঁইপাড়া গ্রামের ৩৬০ জন গ্রাহকের মধ্যে ৪০ জন গ্রাহক চাঁদার টাকা দেয়ায় তাদের বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়। অবশিষ্ট ৩২০ জন গ্রাহক চাঁদা না দেয়ায় তাদের নামে বরাদ্দকৃত মিটার আটকে রাখা হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। অবশেষে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের হস্তক্ষেপে মিটারগুলো উদ্ধার করে সব গ্রাহকের বাড়িতে বিনা খরচে বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করা হয়।
একইভাবে নরদাশ ইউনিয়নের মাদিলা ও সাঁইধারা গ্রামে, গনিপুর ইউনিয়নের বাসুবোয়ালী, চকমহব্বতপুর ও চান্দের আড়া গ্রামে এবং বাসুপাড়া ইউনিয়নের বীরকয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের সংযোগের নামে ব্যাপকহারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার বেলাল উদ্দিন বলেন, বাগমারার প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে পল্লীবিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর জন্য গ্রাহকদের কোনো টাকা পয়সা খরচ করতে হবেনা। তবে বিভিন্ন গ্রামে পোল পৌঁছার পর গ্রামের দালালরা বিভিন্ন কৌশলে গ্রাহকদের কাছে থেকে টাকা পয়সা আদায় করছে বলে এ পর্যন্ত অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই বিদ্যুৎ সংযোগের নামে কোনো দালালকে টাকা পয়সা না দেয়ার জন্য গ্রাহকদের সতর্ক করে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং এলাকায় মাইকিং করেও প্রচার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।॥


আরো সংবাদ



premium cement