২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিঠাপুকুরে ৭ ডাক্তার দিয়ে ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা

-

রংপুরের মিঠাপুকুরবাসীর চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে সাতজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা। আট বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটার।
১৭টি ইউনিয়নের ৩১২টি গ্রাম নিয়ে গঠিত মিঠাপুকুর উপজেলায় পাঁচ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৫ জন মানুষের বসবাস। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একটি, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১৭টি ও কমিউনিটি ক্লিনিক ৬৪টি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ ২১টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র সাতজন। এই সাতজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে প্রায় ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘ দিন ধরে এই হাসপাতালে কনসালট্যান্ট (সার্জন), কনসালট্যান্ট (শিশু), কনসালট্যান্ট (চক্ষু), কনসালট্যান্ট (সার্জারি), কনসালট্যান্ট (চর্ম ও যৌন), কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), ডেল্টাল সার্জন ও অ্যানেসথেটিস্ট পদ শূন্য রয়েছে। এই হাসপাতালে আধুনিক মানের দুটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। অ্যানেসথেটিস্ট ও কনসালট্যান্ট (সার্জন) না থাকায় আট বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। দুটি জেনারেটর থাকলেও মেরামত না করায় দীর্ঘ দিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতির আলোয় চলে চিকিৎসাসেবা। এখানে নেই রক্ত পরিসঞ্চালনের কোনো ব্যবস্থা। বর্তমানে বিরাজমান নানা সমস্যার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ১৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন করে মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র পাঁচজন। ৬৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসক নেই। চিকিৎসা দেন প্রোভাইডাররা। এ ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ৫১টি পদ শূন্য রয়েছে। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোন্নাফ হোসেন বলেন, যেকোনো রোগী ভর্তি করার জন্য নিয়ে গেলে ভর্তি না করে চিকিৎসকরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর ফলে অসচ্ছল পরিবারের রোগীদের নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরাজমান সমস্যা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা: আব্দুল হাকিম বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিরাজমান সমস্যা সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত এক জনসমাবেশে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ ও ট্রমা সেন্টার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজো সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেনি। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি? এমনটাই প্রশ্ন এলাকাবাসীর। চিকিৎসকের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি বলেন, মিঠাপুকুরে কর্মরত হিসেবে বেতন নিয়ে যেসব চিকিৎসক অন্যত্র কর্মরত আছেন, তাদের বেতন না দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। প্রায় ছয় লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের শূন্য পদ পূরণ, অপারেশন থিয়েটার চালু ও শয্যা বাড়ানোর জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এই এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সচেতনসমাজ।


আরো সংবাদ



premium cement