সুন্দরবনে জলদস্যু আতঙ্ক : মুক্তিপণ দিলেও প্রাণ দিতে হয় জেলেদের
- মুহা: জিললুর রহমান সাতক্ষীরা
- ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০, আপডেট: ২২ আগস্ট ২০১৯, ২১:৪৩
বঙ্গাপসাগরসংলগ্ন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের নদী ও খালে মুক্তিপণ অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুন্দরবনের শ্রমজীবী জেলে ও বাওয়ালিদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়কে কেন্দ্র করে জলদস্যুরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে এখানকার বননির্ভরশীল শ্রমজীবী মানুষেরা। অপহরণের পর চাঁদা আদায় শেষে অপহৃতরা মুক্তি পেলেও অনেকের ভাগ্যে জুটছে মৃত্যু পরোয়ানা।
সুন্দরবন এলাকার শ্রমজীবী মানুষের প্রধান পেশা বনসম্পদ আহরণ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা। শত শত জেলে বাওয়ালি ও মৌয়াল প্রতিদিন বন ও নদীতে এ ভাবে শ্রম দিয়ে তাদের ভাগ্যের অন্বেষণ করে থাকে। আর এ ভাগ্যের অন্বেষণ করতে গিয়ে প্রায়ই তাদের জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোসহ জীবন দিতে হচ্ছে। সুন্দরবনে শওকত বাহিনী, মান্নান বাহিনী, বড় ভাই ও রাজু বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তাদের অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি করে আটক রাখছে। মুক্তিপণ আদায় শেষে তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। নৌকায় বাঁধা লাল পতাকা দেখে নির্দিষ্ট স্থানে মুক্তি পণের টাকা পৌঁছিয়ে দিতে হয় জলদস্যুদের কাছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেলে বাওয়ালিদের হত্যা করে লাশ সুন্দরবনের নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। জীবিকার সন্ধানে অনেকে অত্যাচার সহ্য করেও বনে যায় আবার ভয়ে অনেকে বনে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া শ্যামনগরের টেংরাখালি গ্রামের আদম গাজী জানান, সুন্দরবনের ভেতরে কলাগাছী এলাকায় খালে মাছ ধরছিলাম এ সময় জলদস্যু শওকত বাহিনীর সদস্যরা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। ১২ দিন থাকার পরে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি। কাছে যেসব জাল-দোড়াসহ মালামাল ও সরঞ্জামাদি ছিল তাও তারা নিয়ে নেয়। জলদস্যুদের অত্যাচারে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া প্রায় প্রতিটি জেলে বাওয়ালির দাবি বনের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা। নইলে দিনের পর দিন তাদের পেশায় নিয়োজিত লোকেরা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে চলেছে।
এ ব্যাপারে কাটেশ্বর টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, অপহৃত জেলে বাওয়ালি ও মৌয়ালরা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসে আমাদের জানায় না। ফিরে আসা জেলে বাওয়ালিদের বারবার সুন্দরবনে যেতে হয় যে কারণে জলদস্যুদের হাতে অপহরণের কথা ভেবে তারা আমাদের বলে না। তবে আমরা আমাদের সীমিত জনবল আর পুরনো আমলের আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জলদস্যুদের মোকাবেলা করে থাকি। জলদস্যুরা এতই বেপরোয়া যে, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের খবর জানালে পরে ওই সব জলদস্যুরা গ্রামে এসে তাদের পরিবারের ওপর হামলাসহ নানা ধরনের নির্যাতন করে থাকে। বন নির্ভরশীল এসব খেটে খাওয়া জেলে বাওয়ালিরা চায় শঙ্কামুক্ত সুন্দরবন, বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা ও বন্ধ না হোক তাদের উপার্জনের পথ। আর সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য দরকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রসহ উন্নতমানের নৌযানের প্রয়োজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা