২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুয়াকাটা রক্ষা বাঁধের কাজ শেষের আগেই বিলীন জিও টিউব

কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাঁধের জিও বস্তার বালি বেড়িয়ে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে হনয়া দিগন্ত -

সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অর্থায়নে জিও ব্যাগ দিয়ে পরীক্ষামূলক সুরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হতেই জিও উিউবের বালু বেরিয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৯০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। সৈকতের জিরো পয়েন্টের পূর্বাংশে জিও ব্যাগ ও টিউব নির্মাণের ৬০ভাগ কাজ শিডিউল মোতাবেক হলেও পশ্চিম পাশে কোনো শিডিউলই মানা হয়নি। জিও টিউব সমুদ্রের বালু দিয়ে ভরা হয়েছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে অসমাপ্ত রেখেই কাজ বুঝিয়ে দেয়ার তোড়জোড় চলছে।
কলাপাড়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সৈকত ভাঙনরোধে এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৫৬০ মিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের জন্য ১৫ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়া হয় বিজে জিও টেক্সটাইল লিমিটেডকে; যা চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা ছিল। সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার পিকনিক স্পট থেকে শুরু করে কুয়াকাটা দাখিল মাদরাসা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারব্যাপী জিও বাগে এই মেরিন ড্রাইভ রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। এ রাস্তায় ৫৬টি জিও টিউব ও আট হাজার পিস জিও বস্তা দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিটি জিও টিউবের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ মিটার এবং প্রস্থ হবে ৪ মিটার। প্রতিটি জিও বস্তার সাইজ হবে পিপি সাইজ। প্রতিটি জিও টিউবের রিভার সাইডে ২.৭৪ মিটার প্রস্থের দু’টি করে বস্তা এবং কান্ট্রি সাইডে দু’টি করে ২.৭৪ মিটার উঁচু ব্যাগ দিয়ে এ মেরিন ড্রাইভ সড়ক বা সৈকত সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার নির্দেশনা কোটেশনে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করা থেকে এ পর্যন্ত ৪০টির মতো টিউব তৈরি করতে পেরেছে। যেসব টিউব তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগের বালু বের হয়ে গেছে। ২.৭৪ মিটার উঁচুর স্থলে পশ্চিমাংশের টিউবগুলো অধিকাংশই দুই মিটারেরও কম উঁচু করা হয়েছে। আট হাজার জিও ব্যাগের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জিও বস্তা তৈরি করলেও তাও আবার সমুদ্রের বালু ভরার কারণে বস্তা থেকে বালু বের হয়ে গেছে। পাউবোর অর্থায়নে জিও ব্যাগ দিয়ে সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কাজের শুরু থেকেই। এমন অভিযোগ আমলে না নিয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে কাজ হচ্ছে বলে দাবি করায় পর্যটন ব্যবসায়ীরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
জিও টিউব ও ব্যাগে ২০০ নম্বর সিপি বালু ভরে সৈকত রক্ষা বাঁধ দেয়ার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগই দেয়া হয়েছে সৈকতের বালু। কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনে ও রাতের আঁধারে সমুদ্রের বালু দিয়ে সুরক্ষা বাঁধের কাজ চালিয়ে এলেও পাউবো কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে পর্যটনপ্রেমীরা হতাশ হয়েছেন।
সৈকত সুরক্ষার পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও যেমন খুশি তেমন কাজ করা হয়েছে। এলোমেলোভাবে জিও টিউব বসানোর কারণে সৈকতের সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জিও ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিজে জিও টেক্সটাইল লিমিটেড এ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এমন অনিয়ম করলেও পাউবো বলছে নিয়মমতোই কাজ হচ্ছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী হোসাইন আমির বলেন, এমন সুরক্ষা বাঁধ তারা আশা করেননি। কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন অনিয়মকে সমর্থন দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ আলম হাওলাদার অভিযোগ করেন, বেড়িবাঁধের সাথে গর্ত করে মোটা বালুর পরিবর্তে জিও টিউবে লোকাল বালু ভরা হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করার কারণে পাউবো কলাপাড়া কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগ এনে নোটিশ দিয়েছে। সঠিকভাবে কাজ না করে উল্টো তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বলেন, আমি নিজে গিয়ে দেখেছি সুরক্ষা বাঁধে অনিয়ম করা হয়েছে। নি¤œমানের কাপড় ও লোকাল বালু ভরার কারণে অনেক টিউব থেকে বালু বের হয়ে গিয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে কাজ করার জন্য সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কাজে অনিয়মের বিষয়ে তিনি পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছেন বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মাদ অলিউজ্জামান অনিয়মের কথা স্বীকার করে বলেন, পাইপ দিয়ে বালু ভরার সময় কিছু লোকাল বালু পানির সাথে টিউবে পড়েছে। জিও টিউব থেকে বালু বের হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পর্যটকেরা টিউব কেটে ফেলার কারণে বালু বের হয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement