২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কারখানা মালিকেরা পাতা না কেনায় বিপাকে পঞ্চগড়ের চা চাষিরা

তেঁতুলিয়ায় চা পাতা বিক্রি করতে না পারায় দা দিয়ে কেটে ফেলে দিচ্ছে এক কৃষক :নয়া দিগন্ত -

তেঁতুলিয়াসহ পঞ্চগড়ের ১৫টি কারখানার মালিক নিয়মিত চা পাতা না কেনায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। সঠিক সময়ে বাগানের কাঁচা পাতা বিক্রি করতে না পারায় কেটে ফেলে দেয়ার পাশাপাশি বাগান পরিচর্চায় তাদের অনিহা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২০০০ সালের শুরুর দিকে তেঁতুলিয়ায় সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র পরিসরে চা চাষ শুরু হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন এক মাইলফলক যুক্ত হয়। এর আগে তেঁতুলিয়া উপজেলার অর্থনীতি আখ, আনারস ও পাথরের ওপর নির্ভরশীল ছিল। অর্থকরী ফসল হিসেবে চা আবাদ করে নগদ অর্থ পাওয়ায় গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা ধান ও সবজি চাষের জমি, বাঁশঝাড় এবং বনজ ও ফলদ বাগান উড়াজ করে বাগান করেন। তখন চাষিরা বাগানের কাঁচা চা পাতা কারখানার মালিকদের কাছে ২৫ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করেন। কিন্তু সম্প্রতি চা কারখানা মালিকেরা নানা অজুহাতে চা পাতার দাম কমাতে থাকেন। চা চাষিরা এ ব্যাপারে আন্দোলনও করেছেন। তখন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চা পাতা ক্রয়ের নির্ধারিত মূল্য প্রতি কেজি ২৪.৫০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এই দামে বেশ কিছু দিন চা পাতা কেনেন কারখানার মালিকেরা। সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চা কারখানার মালিক, চা বাগান মালিক ও জেলা প্রশাসন সুধীজনের সমন্বয়ে চারপাতা যুক্ত চায়ের কুঁড়ি কাঁচা পাতার মূল্য ১৬.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো চাষির পাতার মান ভালো না হলে ১০% হারে কর্তন করে চাষিদের মূল্য পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু জেলা প্রশাসকের ওই সভার সিদ্ধান্তগুলো অমান্য করে কারখানার মালিকরা ৩৫% থেকে ৪০% কর্তন করে ১২.৫০ টাকা দরে মূল্য পরিশোধ করেন। এক্ষেত্রে চাষিদের ভাউচারে কর্তনের হিসাব ও প্রতি কেজির মূল্য উল্লেখ না করে শুধু মোট টাকা পরিশোধ করা হয়। এ ব্যাপারে কোনো চাষি অজুহাত দেখালে তার পাতা ওই কারখানার মালিক নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে চা চাষিদের দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া হাসপাতালের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও চা বাগান মালিক ডা: আবুল বাশার বলেন, আমি ২ একর জমিতে চা বাগান করেছি। কিন্তু বর্তমানে চা পাতার দামের পতনের পাশাপাশি কারখানার মালিকরা নানা অজুহাতে পাতা কিনছেন না। ফলে শ্রমিক দিয়ে বাগানের কাঁচা পাতা কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে। সঠিক সময়ে পাতা বিক্রি দিতে না পারায় প্রতি মাসে আমাকে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাগান উপড়ে ফেলে দিতে হবে।
কাজীপাড়া গ্রামের চা বাগানের মালিক প্রধান শিক্ষক কাজী মতিউর রহমান বলেন, চা চাষিদের অবস্থা অনেকটা তৎকালীন নীল চাষিদের মতো হয়েছে। কারণ চা কারখানার মালিকদের একতরফা সিদ্ধান্তে যে মূল্যে কাঁচা পাতা কিনছেন তা দিয়ে বাগানের সার-কীটনাশক ও পাতা তোলার কামলার খরচও হয় না। ফলে বাগানের পরিচর্যা করাও সম্ভব হচ্ছে না।
চা চাষি আব্দুল লতিফ জানান, ভারত থেকে অন্যান্য পণ্যের সাথে চা আমদানি করায় দেশীয় চা পাতা অকশন মার্কেটে দাম নেই। ফলে অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে মাইকিং করে চা পাতা কেনা বন্ধ রেখেছে। আর কিছু কারখানা চা পাতা কিনলেও দালালের মাধ্যমে ৫ শ’ থেকে ৭ শ’ টাকা ঘুষ দিয়ে একাধিক দিন ঘুরে চা পাতা দেয়ার সিরিয়াল নিতে হয়।
সচেতনমহল মনে করেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বিপুল সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়া তথা পঞ্চগড়ের চা শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে। এতে শুধু চাষিরাই আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে তা না, কাঁচা মাল সরবরাহ না পেলে কারখানার মালিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, চা চাষিরা যেন পাতার ন্যায্য মূল্য পান সেই জন্য চা বোর্ডের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কারখানার মালিক ও বাগান মালিকদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কারখানার মালিকেরা সেই শর্ত এখনো বাস্তবায়ন করেননি।


আরো সংবাদ



premium cement