১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

  নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনের অভয়াশ্রমে মাছ শিকার

-

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মৎস্য প্রজনন জোনের অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরার অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে জেলেরা চরপাটা (চরঘেরা), ভাসনা, খরচি, নেট সাবার ও খুঁটা জাল পেতে মৎস্য প্রজনন এলাকার ছোট-বড় মাছ শিকার করছে। গোটা রেঞ্জের নদী ও ছোট-বড় খালে দু’মাস মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সুযোগ সন্ধানী মাছ ব্যবসায়ীরা তা মানছে না। বনবিভাগের কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ম্যানেজ করে শরণখোলা ও পাথরঘাটা উপজেলার চিহ্নিত কিছু মাছ ব্যবসায়ী এ অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। জানা যায়, শরণখোলা রেঞ্জের বেশির ভাগ এলাকাকে বনবিভাগ মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এতে জীবন-জীবিকার জন্য জেলেরা যেমন বিপাকে পড়েছে, তেমনি অসাধু বনকর্মীদের অবৈধ আয়ের উৎস বন্ধ হয়েছে। এ কারণে বনবিভাগের কতিপয় অসৎ বনকর্মী ও মৎস্য ব্যবসায়ী এসব অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলে জানান, মৎস্য অভয়াশ্রম খ্যাত কটকা ও এই অফিসের আওতাধীন ছোট-বড় খাল, কচিখালী ও তার আশপাশের খাল, শেলা, কোকিলমণি, টিয়ারচর, ছাপড়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের মাছ আহরণ করছে শরণখোলা উপজেলার চালিতাবুনিয়ার চান মিয়া ওরফে চান্দু এবং গাবতলা, তাফালবাড়ি ও রাজাপুর এলাকার কয়েকজন চিহ্নিত মৎস্য ব্যবসায়ী এবং পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা স্লুইসের হালিম খাঁসহ অনেকে। এ ছাড়া চরদোয়ানী এলাকার কিছু ব্যবসায়ী এসব কাজে লিপ্ত রয়েছে। চান্দেশ্বর টহলফাঁড়ি অফিসের আওতাধীন অভয়াশ্রম ও সুপতি এলাকায় মাছ আহরণ করে থাকে চরদোয়ানী এলাকার মাফুল মেম্বর। মওসুম চুক্তিতে জাল প্রতি সংশ্লিষ্ট স্টেশন ও টহলফাঁড়িতে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া প্রতি গোনে জাল প্রতি পাঁচ হাজার টাকা, পাঁচটি ইলিশ ও অন্যান্য মাছ। কচিখালী অফিস সংলগ্ন খাল, কটকা, বন্ধুর খালসহ বিভিন্ন খাল ও শেলা এলাকায় ২৫ থেকে ৩০টি খুঁটা জাল পাতা হয়। এদেরও একই রেটে টাকা পরিশোধ করতে হয়।
সূত্র আরো জানায়, শরণখোলা স্টেশনের আওতাধীন ভোলা নদীতে ভাসান জাল, নেট সাবার, খরচি ও মাছের রেণু পোনা ধ্বংসকারী চরপাটা (চরঘেরা) জাল পেতে ইলিশ ও বিভিন্ন জাতের মাছ ধরে থাকে শরণখোলার সেনাতলা গ্রামের আলম, মিজানুর রহমান, কালাম, মাহাবুব ও খলিলুর রহমানসহ জেলেরা। এদের কাছ থেকে জাল ও গোনা প্রতি আদায় করা হয় পাঁচ হাজার টাকা করে। এরা বড়শি পাস নিয়ে এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
বনসংলগ্ন শরণখোলার একাধিক ব্যক্তি জানায়, ১ জুলাই থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবনে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ (অবরোধ) ঘোষণা করা হলেও কেউ মানছে না এ আইন। অবরোধের প্রথম দিকে কোকিলমণি এলাকায় শরণখোলার তাফালবাড়ির এক ব্যবসায়ীর একটি ট্রলার মাছ শিকারকালে কোস্টগার্ড আটক করে বনবিভাগের হস্তান্তর করে। কিন্তু তদবিরের জোরে এবং অজ্ঞাত কারণে নামমাত্র জরিমানা দেখিয়ে বনবিভাগ ট্রলারটি ছেড়ে দেয়।
তবে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন তার রেঞ্জ এলাকার অভয়াশ্রমে মাছ শিকারের কথা অস্বীকার করেন। ডিএফও (পূর্ব বিভাগ) মাহামুদুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনের অভয়াশ্রমে সব প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। যদি কেউ ধরে তাহলে তদন্ত করে যারা যারা জড়িত তাদের সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement