১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হিলি স্থলবন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ৩৬ কেটি টাকা কাস্টমসের হয়রানি ও দ্বৈতনীতি দায়ী অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

-

সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। নানা ঢাকঢোল পেটানো সত্ত্বেও রাজস্ব আদায় সাফল্য দেখাতে পারেনি বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে হওয়ায় এবং ভারতের ফারাক্কা ব্রিজের সংস্কার কাজের কারণে আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমেছে বলে দাবি হিলি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাস্টমসের নানা হয়রানি এবং অন্য বন্দরের তুলনায় হিলি স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে দ্বৈতনীতির কারণে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমেছে।
হিলি কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলি স্থলবন্দরে ২৬৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়। এর স্থলে গত জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত এক বছরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করেছে ২৩৩ কোটি এক লাখ টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা কম।
হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাস্টমসের হয়রানির কারণেই কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, এই বন্দরে লক্ষ্যমাত্রর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড রয়েছে। অথচ কাস্টমসের হয়রানি ও উদাসীনতার কারণে বন্দরটি কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় করতে পারছে না।
আমদানিকারক আমিনুল ইসলাম লিটন জানান, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। কাস্টমস একটু সহনশীল হলেই রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তিনি জানান, হিলি স্থলবন্দরে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে তা অন্য বন্দরে নেই। তারপরও এই বন্দরটি কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে।
বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাহিনুর রেজা শাহিন জানান, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবোঝাই ট্রাকের চাকার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হচ্ছে পণ্যের পরিমাণ। ফলে কম পণ্য এনে বেশি শুল্ক কর দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কাস্টমসের বেঁধে দেয়া চাকার বারের কারণে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে না।
আমদানিকারক মোস্তাক হোসেন মাস্টার জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় আপেল, আঙুরসহ নানা ধরনের ফল আমদানিতে সরাসরি নিষেধ করছে রংপুর কাস্টমস কমিশনারেট। তিনি বলেন, কাস্টমসের বেঁধে দেয়া প্রথার কারণে ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করতে পারছে না। পাশাপাশি অধিক শুল্ক যুক্ত পণ্য আমদানি করে কাস্টমসের কায়িক পরীক্ষার নামে মালামাল তছনছসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ওই সব ব্যবসায়ী এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি জানান, একটি ট্রাকে কী পরিমাণ পণ্য আনতে হবে তা কাস্টমস নির্ধারণ করে দিচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের আমদানি খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বেনাপোলসহ অন্যান্য বন্দরের রেফারেন্স মূল্য না মেনে এখানকার কাস্টমস মনগড়া মূল্য বসিয়ে সে অনুযায়ী শুল্ক কর আদায় করছে। এ ছাড়াও রয়েছে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ।
তবে এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, সব নিয়ম মেনেই হিলি স্থল বন্দরে পণ্যছাড়সহ সব কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে যাওয়া এবং ভারতের ফারাক্কা ব্রিজের সংস্কারের কারণে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ায় রাজস্ব আয় কমেছে।
এদিকে হিলি স্থলবন্দরের রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে এখানকার ব্যবসায়ীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement