২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বদলগাছীতে এক কিলোমিটার খালের অভাবে জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি

বদলগাছী বালুভরা কুশারমুড়ির মাঠে অনাবাদি জমির দৃশ্য :নয়া দিগন্ত -

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় একটি খালের অভাবে জলাবদ্ধতায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি অনাবাদি পড়ে আছে। ওই মাঠে প্রায় এক কিলোমিটার একটি খাল খনন করা হলে জমিগুলো তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এতে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।
জানা গেছে, উপজেলার বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদের কুশারমুড়ী মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল। মাঠের পানি ওই ড্রেন দিয়ে বের হয়ে মাঠের পশ্চিম পাশ দিয়ে খলসি ও নিহনপুর গ্রামের মধ্য দিয়ে মাগুরা গ্রামে অবস্থিত মাগুরা বিলে চলে যেত। এতে করে ওই মাঠের চাঁনপুর, মির্জাপুর, দোনইল, খলসি, পাইকপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বিঘা জমির ফসলের কোনো সমস্যা হতো না। ফলে মাঠে বোরো, আমন ও পাটের আবাদ করা হতো।
কিন্তু ১৫ থেকে ২০ বছর আগে মাগুরা গ্রামের শেষ প্রান্তে ওই ড্রেনের মুখে মাটি ভরাট করে সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করা হয়। এতে করে কুশারমুড়ী মাঠের পানি বের হয়ে খলসি গ্রাম পর্যন্ত যেতে পারলেও মাগুরা বিলে যেতে পারে না। ফলে পানি বের হয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ না থাকায় মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে মাঠে বোরো, আমন ও পাটের ফসল ডুবে যায়। এভাবে কৃষকরা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমনের আবাদ করা ছেড়ে দেন। পরে আবার পাটের আবাদ করাও ছেড়ে দেন কৃষকরা। সর্বশেষ শুধু একটিমাত্র বোরো আবাদ করা হয়। বোরো ধান পাকার সময় বৃষ্টি হলে জমিতে হাঁটু পানির মধ্যে এই ধান কাটতে হয়। এতে করে তিন ফসলি জমি এখন এক ফসলে পরিণত হয়েছে। পানি জমে থাকায় জমিতে কচুরি পানার স্তূপ জন্মেছে। খাওয়ার জন্য স্থানীয়রা এ মাঠ থেকে মাছ শিকার করে থাকেন। কুশারমুড়ী বিলের উত্তর পাশ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার খাল খনন করে মরা নদীতে পানি নেমে দেয়া হলে এই অবস্থার উন্নতি হবে। এভাবে খাল খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলে আবারো জমিতে তিন ফসলের আবাদ করা সম্ভব হবে।
কুশারমুড়ী গ্রামের কৃষক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, গত ১৫ থেকে ২০ বছর আগে বোরো, আমন ও পাটের ফসল হতো। বর্তমানে জলাবদ্ধতা কারণে শুধু বোরো ফসল করা হয়। ডুবে যাওয়ার কারণে অন্য কোনো আবাদ করা সম্ভব হয় না। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল খনন করা হলে ওই খালের পানি দিয়ে আবাদ করা হবে। এ ছাড়া খালের পানিতে মাছচাষ ও হাঁস পালন করা হবে।
একই গ্রামের কৃষক আহাদ আলী মিয়া বলেন, খাল খননের সময় যদি আমার জমির ওপর দিয়ে যায় সেক্ষেত্রে সরকারকে আমি জমি দিবো। জলাবদ্ধতার কারণে সারা বছরই কয়েক শ’ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকে। খাল খনন করা হলো কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক উপকৃত হবেন। আমাদের সবার জন্যই সুবিধা হবে।
মির্জাপুর গ্রামের সাইদুল, দোনইল গ্রামের আসব আলী, কুশারমুড়ী গ্রামের বয়জ্যেষ্ঠ সাইদুল ইসলাম ও শুম্ভনাথ মণ্ডল বলেন, মাঠের উত্তর পাশ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার খাল খনন করে মরা নদীতে পানি নামার ব্যবস্থা করতে হবে। জুয়েল ও সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খনন করা হলে একই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। আবার খালের পানিতে আমাদের মতো বেকার যুবকের মাছ চাষে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এতে করে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। কৃষি বান্ধব সরকারের কাছে আমাদের দাবি জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত খাল খনন করা হোক।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাসুম আলী বেগ বলেন, যেহেতু আগে মাঠের পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল। মাঠটি পরিদর্শন করে স্থানীয় জনসাধারণ এবং সরকারি সহযোগিতায় প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement