১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ফেনীতে হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধে জড়িত বহিরাগত কিশোররা

-

ফেনী জেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। এসব অপরাধীর বেশির ভাগই বহিরাগত। সাম্প্রতিক সময়ে চারটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। অপরাধীরা ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী। এ বয়সে তারা ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে জেল খাটছে। অনেকে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহরের গাজীক্রস রোডের হাসান আলী ভূঁঞা বাড়িসংলগ্ন হক ম্যানশন থেকে ৩০ মে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পিয়ন সফি উল্যাহর (৬০) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পর দিন নিহতের ছেলে আবদুল মোতালেব বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: মাঈন উদ্দিন ভূঁঞা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শহরের অ্যাকাডেমি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ বাগেরহাট জেলার মোরলগঞ্জ থানার পঞ্চকরণ গ্রামের চাঁন মিয়া হাওলাদারের ছেলে সোহেল হাওলাদার (১৯) ও তার ভাই রনি (১৬), একই থানার সুনিজর গ্রামের কাজী বাড়ির মো: আব্বাস খানের ছেলে মো: ইয়াছিন সাকিব (১৬), লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার চর মোহনা গ্রামের আলীমুদ্দিন দেওয়ান বাড়ির মো: জয়নাল আবেদীনের ছেলে মেহেদী হাসান রাব্বি (১৬)। টাকা চুরি করতে পিয়ন মো: সফি উল্যাহকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছে রাব্বি, সাকিব ও রনি। হত্যা করে ১ লাখ টাকা ও স্বর্ণ, ১টি ওয়ালটন মোবাইল সেট নিয়ে যায়। সাকিব ১০ হাজার ও মোবাইল ফোন, রাব্বি ১০ হাজার এবং রনি ৫০০ টাকা ভাগে পায় বলে আদালতে জবানবন্দীতে জানায়। সোহেল, রনি, রাব্বি ও সাকিব গাজী ক্রস রোডে ভাড়া থাকে।
১৯ মে সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর ছনুয়া গ্রামে নিখোঁজের দুই দিন পর বেলায়েত হোসেন (৪৫) নামে এক পোলট্রি ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে ওই দিন ফার্মের কর্মচারী মো: ফুজায়েল আহম্মদকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩১ মার্চ রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তেমুহনী এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ৭ এপ্রিল রোববার ভোরে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারায় একটি কলা বাগানের ঝোপ থেকে গলা কাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুভ দক্ষিণ কাশিমপুর কালা মিয়া কন্ট্রাক্টর বাড়ির প্রবাসী ইমাম হোসেনের ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুরেজিৎ বড়–য়া জানান, ৮ এপ্রিল সোমবার বিকেলে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামের আবদুস সালাম মিস্ত্রি বাড়ি থেকে মো: কামাল উদ্দিনের ছেলে ও তেমুহনী মাদার কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুভকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে বলে পরের দিন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে সহপাঠী মো: ইসমাইল হোসেন ইমন (১৪)।
২৭ জানুয়ারি শহরের পাঠানবাড়ী এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেনের (১২) লাশ পরের দিন পাঠানবাড়ি এলাকার জেবি টাওয়ারের সামনে থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, ২৮ জানুয়ারি দুপুরে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূলহোতা সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকারীরা আরাফাতের পা ভেঙে ফেলে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে। ২৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহজাহান সাব্বিরকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রের জাকির হোসাইনের আদালতে হাজির করলে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে সাব্বির সেদিন লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেয় ও জড়িত চার-পাঁচজনের নাম প্রকাশ করে।


আরো সংবাদ



premium cement