১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আদমদীঘিতে ৪৪ বছর পর এক নারী ফিরে পেলেন আপন ঠিকানা

-

বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে অজ্ঞতানামা বাকপ্রতিবন্ধী এক নারী ৪৪ বছর পর স্থানীয় এক সাংবাদিকের প্রচেষ্টায় ফিরে পেয়েছেন তার আপন ঠিকানা। সেই মহিলা এখন তার স্বামী, সন্তানের হেফাজতে আছেন।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের পর এক অজ্ঞতানামা বাকপ্রতিবন্ধী নারী সান্তাহার পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের রথবাড়ি এলাকায় আসেন। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় স্থানীয় মানুষ তাকে ‘বুকি’ বলে ডাকতে শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে কাজ করতেন। পরে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতে শুরু করেন। সৎ সুলভ আচরণ হওয়ায় এলাকার সাবাই তাকে টাকা-পয়সা দান করতেন। তবে তার কোনো আবাসনের ব্যবস্থা ছিল না। কখনো মন্দিরে, কখনো মার্কেটের বারান্দায়, কখনো ‘কমলা’র দোকানে, কখনো সাবেক কমিশনার আফজাল হোসেনের বাসায় রাতে ঘুমাতেন। কিছুদিন আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন তিনি। প্রায় ৮০ বয়সে তিনি সারাদিন দোকানে-বাসায় ভিক্ষে করে বেড়াতেন। কিছুদিন তার আশ্রয় হয় দোকানি ‘কমলা’র দোকানে।
গত এক বছর আগে থেকে স্থানীয় শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার আদমদীঘি উপজেলা প্রতিনিধি সেই মহিলার অনুসন্ধান ও সরকারি সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে কাজ শুরু করেন। গত ৪ জুন ‘৪৪ বছরেও পরিচয় মেলেনি এক বাকপ্রতিবন্ধী নারীর’ শিরোনামে দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকায় এই সক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এক এক করে সাতটি পত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। একটি দৈনিকে সেই সাংবাদিকের নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে সেই বাকপ্রতিবন্ধী নারীর খোঁজ চাওয়া হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেই ‘বুকি’র কয়েকজন আত্মীয়স্বজন দাবি করে মোবাইল ফোনে সেই মহিলার বিষয়ে নানা তথ্য চাওয়া হয়। পবিত্র ঈদুল ফেতরের আগে দেশের দুই স্থান থেকে আত্মীয় বলে দুই দাবিদার এসে সেই বুকি মহিলাকে দেখে যান।
বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পর বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রামের বকুল ও তার সঙ্গীদের হাতে সেই ‘বুকি’কে তুলে দেয়া হয়। এই সময় সেই মহিলার ছেলে বলে দাবিদার আব্দুস সালাম, বকুলসহ প্রায় ১৫ জন স্বজনসহ ওই এলাকার গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই মহিলার ছেলে দাবিদার আব্দুস সালাম জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর সেই মহিলা বাকপ্রতিবন্ধী ছিলেন না। তিনি ছিলেন বিবাহিত এবং পাঁচ সন্তানের জননী। তার এক সন্তান স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন। তার স্বামীর নাম আফতাব হোসেন মণ্ডল। তিনি বর্তমানে বয়স্কজনিত নানা রোগে শয্যাশায়ী। মুক্তিযুদ্ধের পর মানসিকভাবে অসুস্থ অবস্থায় তিনি হারিয়ে যান। সেই মহিলার স্বজন বলে দাবিদার সালাম আরো জানান, গত ৪৪ বছর তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া সেই মহিলাকে নানা স্থানে খোঁজখবর নিয়েছেন। ৪৪ বছর পর বিভিন্ন পত্রিকায় সচিত্র সংবাদ দেখে তারা তাকে চিনতে পারেন। এরপর তারা তাদের হারানো মাকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যত হন। তবে সেই মহিলার আরেক আত্মীয় বকুল জানান, উনি যদি আমাদের কাছে থাকতে না চান তাহলে আমরা তাকে আগের ঠিকানায় ফিরিয়ে দেবো।
এ ব্যাপারে সান্তাহার শহীদ আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও সাংবাদিক রবিউল ইসলাম বলেন, ৪৪ বছরের একজন অসহায় নারী পরিচয়হীন অবস্থায় থাকবেÑ বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। সেই ভাবনা থেকে আমি আদমদীঘি উপজেলার সাবেক ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার, মেয়র, সান্তাহার প্রেস ক্লাব, নাগরিক কমিটিসহ ওয়ার্ড কমিশনারের কাছে সেই মহিলার জন্য সরকারি বাড়ি ও সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করি। সে মোতাবেক ওই মহিলার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে আনতে সক্ষম হই। কয়েকটি এনজিও তাকে নিজেদের দায়িত্বে নেয়ার কথা বলে। কিছু প্রবাসীও তাকে সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করেন, কিন্তু ওই মহিলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। আর এর মধ্যেই তার স্বজনদের খোঁজ মেলে। সেই বাকপ্রতিবন্ধী মহিলা এখান থেকে যাওয়ার পর আমি মোবাইলে আত্মীয় বলে দাবিদারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। যতদূর জেনেছি সেই বাকপ্রতিবন্ধী নারী ভালো আছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement