২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জামালগঞ্জে অনুমোদনের আগেই ৪০ দিনে কর্মসূচির কাজ শেষ দরিদ্ররা সুফল পাচ্ছেন না

-

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের আগেই অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ (৪০ দিনের) সম্পন্ন করে ফেলেছেন বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। নিয়মানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেন। এই প্রকল্পে নির্ধারিত শ্রমিকের তালিকা অনুযায়ী জবকার্ড থাকে। নির্দিষ্ট শ্রমিকেরা প্রকল্পে কাজ করবেন এবং তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকবে। কাজের পর মাস্টাররোলের মাধ্যমে সেই শ্রমিকেরা তাদের স্ব স্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকা থেকে তাদের মজুরি উত্তোলন করবেন। কিন্তু বাস্তবে আদৌ এসবের কোনো নিয়মই মানা হচ্ছে না।
নিয়ম ভঙ্গ করেই সংশ্লিষ্টরা সব স্তরে সমঝোতায় মাধ্যমে বরাদ্দ নয়ছয় করা হচ্ছে বছরের পর বছর এমন অভিযোগ এখন মুখে মুখে। সম্প্রতি জামালগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে এই প্রকল্পের খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, গেল ফেব্রুয়ারি- মার্চেই অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন করে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বরাদ্দ উত্তোলনের জন্য মাস্টাররোল প্রস্তুত করছেন। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, কোনো প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, জামালগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির বরাদ্দকৃত কার্ড হচ্ছে ১০৯১টি। এর মধ্যে জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ১৩০টি, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে ১২৭টি, ফেনারবাঁক ইউনিয়নে ৩১৪টি, বেহেলী ইউনিয়নে ২০৪টি, ভীমখালী ইউনিয়নে ১৭৮টি, সাচনাবাজার ইউনিয়নে ১৩৮টি। এতে প্রতি পর্যায়ে শ্রমিকেরা মজুরি পাবেন ৮৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এরকম প্রকল্প বছরে দুইবার সম্পন্ন করা হয়ে আসছে। কিন্তু অতিদরিদ্ররা এর সুফল কেউই পাচ্ছেন না। বরাদ্দের বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে অন্যদের পকেটে।
প্রকল্প কাজের প্রকল্প চেয়ারম্যানেরা নিজেদের আত্মীয়স্বজন ও অনুগতদের নামে জবকার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করিয়ে নামমাত্র কাজ করে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছেন। জামালগঞ্জ উপজেলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সমাপন প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে জামালগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই প্রকল্পকাজ শুরু ও সম্পন্ন করা সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য অধিদফতরের নির্দেশনা দেয়া আছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য (৪০ দিন) কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে গৃহীত প্রকল্পে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৯ মে ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বদরপুর গ্রাম থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এই লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে বেহেলী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে বদরপুর গ্রাম থেকে হালির হাওর অভিমুখী বেউড়ার জাঙ্গালের রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪০ জন শ্রমিক নির্ধারণ হয়। শ্রমিকদের কাজের মজুরি বাবদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি অনুয়ায়ী, ওই প্রকল্পের কাজ গত মার্চেই সমাপ্ত করা হয়েছে। যদিও এসব প্রকল্পে যথাযথ কর্তৃপক্ষের তখনো কোনো অনুমোদনের চিঠিই আসেনি। অথচ প্রায় দুই মাস আগে মার্চে কাজকে প্রকল্পে ধরে রেখে বর্তমান মে মাসে এসে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে বরাদ্দ উত্তোলনের পাঁয়তারা চলছে। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, রাস্তার কাজে মাটি কাটার স্থানীয় হিসেবে ২২ শ’ টাকা প্রতি হাজার মাটির মূল্য ধরে ২২ হাজার মাটি কাটা হয়। যার সর্বসাকুল্যে মজুরি ব্যয় দেয়া হয় ৪৮ হাজার ৪০০ টাকা। প্রকল্প স্থানে সরেজমিন গেলে, বদরপুর গ্রামের মো: আব্দুস সাহিদ, মো: ঝুনু মিয়া, মো: হারুন রশিদ, শাহীন মিয়া, অখিল পাল, গোপেশ পাল জানান, হাওর থেকে ফসল উত্তোলনে বদরপুর বেউড়ার জাঙ্গালের রাস্তা নির্মাণে কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে তা তাদের জানানো হয়নি। তবে বেহেলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পরামর্শ মোতাবেক গ্রামের লোকেরা মাসিক সুদে টাকা ধার করে রাস্তার মাটি কর্তন করেন। তখন চেয়ারম্যানের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, পিআইও অফিস থেকে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে গ্রামবাসীর টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এখনো গ্রামবাসীর টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। মাটি কাটার শ্রমিক গ্রুপের সর্দার শাহীন মিয়া জানান, তারা সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজার টাকার মাটি উত্তোলনের কাজ করেছেন। এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। অথচ সেই সময় প্রকল্প স্থানটি পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। উপস্থিত গ্রামবাসী জানান, এটা কোনো রাস্তাই হয়নি। মাত্র ২ থেকে ৩ ফুট প্রস্থের এই সরু রাস্তা দিয়ে ফসল আনা-নেয়া তো দূরের কথা, একজন মানুষই হেঁটে যাওয়া যায় না। অভিযোগের ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পিআইওকে দায়িত্ব দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement