২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাঙ্গলকোটে ডাকাতিয়া থেকে অবাধে বালু উত্তোলন হুমকির মুখে জনবসতি ও স্থাপনা

নাঙ্গলকোটের ডাকাতিয়া নদীর রায়কোটে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে :নয়া দিগন্ত -

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ডাকাতিয়া নদী, খাল, ফসলিজমি, পুকুর ও সরকারি দীঘি থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহল বালু উত্তোলনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু পৌরসভার সরকারি গোত্রশাল দীঘি থেকেই ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়েছে। বিনা পুঁজিতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ থাকায় প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত হয়েছে। তারা সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবাধে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে।
গত কয়েক মাসে অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানা বিভিন্ন স্থানে দিনের বেলা অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন মালিকদের পাইপ কর্তন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করেছেন। কিন্তু তারপরও রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে আবার বালু উত্তোলন করা হয়েছে। কোনোভাবেই এ চক্রটিকে থামানো যাচ্ছে না। পরিবেশ আইন উপেক্ষা করে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে একদিকে পরিবেশে যেমন বিপর্যয়ের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে নদী তীরবর্তী জনবসতি, মসজিদ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও ফসলিজমি হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী এখন বালু খেকোদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। রুপাবেরী, নুরপুর, শ্যামপুর, পরিকোট, আগুনশাল, রায়কোট ও শরীফপুর ব্রিজের আশপাশে, ঘাসিয়াল, পূর্বখাঁঘর, মরকটা, ঝাটিয়াপাড়া, নগরিপাড়া, নারান্দিয়া, পূর্ব বামপাড়া, মোড়েশ্বর, চারিতুপা ও নাইয়ারা ব্রিজসংলগ্ন এলাকা, পুঁটিজলা, উরকুটি, খাজুরিয়া, চরজামুরাইল, বাকিহাটি, দক্ষিণ আলিয়ারা ও সাতবাড়িয়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে বালু খেকোরা মাসের পর মাস ধরে ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে।
বালু খেকোরা ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাড়ি করার জন্য নিম্বাঞ্চল ভরাট, মৎস্য প্রকল্পের পুকুর ভরাট এসব কাজের জন্য বালু সরবরাহ করে থাকে। এ জন্য তাদের সাথে বালু খেকোদের লাখ লাখ টাকার চুক্তি হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন খালি জায়গা বালু ভরাট করে বিক্রি এবং সড়ক সংস্কারেও এই বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী চক্রটি বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে নির্বিঘেœ ব্যবসা করে যাচ্ছে। অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী রায়কোট নতুন বাজারসংলগ্ন মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে, রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও ফসলিজমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এদিকে নাঙ্গলকোট পৌরসভার গোত্রশাল সরকারি দীঘি থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘ ছয় মাস ধরে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এক সাথে চারটি ড্রেজার বসিয়েও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ফলে দীঘির আশপাশের শতাধিক বাড়িঘর, ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল রেলপথ এবং কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া থেকে ফেনী পর্যন্ত ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সম্প্রতি পেড়িয়া ইউনিয়নের শাকতলী দীঘি থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ট্রাক্টরে করে বালু নিয়ে যাওয়া অবস্থায় থানা পুলিশ ট্রাক্টর জব্দ করে। পরে প্রভাবশালী মহলটি থানা থেকে ট্রাক্টর উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানা গোত্রশাল দীঘিতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও বালু উত্তোলন বন্ধ করতে পারছেন না।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম, শফিক মিয়া, মোশারফ হোসেন, সহিদ, শরীফসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতিবছর ডাকাতিয়া নদীর পানি কমার পরপরই প্রভাবশালী একটি চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। চলে বর্ষার আগ পর্যন্ত। কখনো কখনো মোটা পাইপ বসিয়ে নদী থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরেও বালু সরবরাহ করা হয়। বালু খেকোরা বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে লাখ লাখ টাকার চুক্তিতে তাদের পুকুর, নিচু এলাকা ও জলাভূমি ভরাট করার কাজে এই বালু সরবরাহ করে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত চার মাসে নাঙ্গলকোট পৌরসভার গোত্রশাল দীঘি, ডাকাতিয়া তীরবর্তী বাঙ্গড্ডার রুপাবেরী, নুরপুর, রায়কোট ইউনিয়নের শরীফপুর, রায়কোট নতুন বাজার, পেড়িয়া ইউনিয়নের শ্রীফলিয়া, কৈয়া এলাকায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানা অবৈধ ড্রেজার মেশিন বন্ধে অভিযান চালান। এ সময় তিনি ড্রেজার মেশিনের সামগ্রী ও পাইপ ধ্বংস করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানা বলেন, পরিবেশ আইনে অবাধে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। বালু উত্তোলন পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমি বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ড্রেজার মেশিনের পাইপ কেটে ফেলেছি। আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগে ড্রেজার মালিকসহ যারা বালু উত্তোলন করছে তারা মেশিন রেখে পালিয়ে যায়। আমি অনেক ড্রেজার মেশিন মালিকের কাছ থেকে এ ধরনের ব্যবসা করতে পারবে না বলে মুচলেকা নিয়েছি। যেখান থেকে এ ধরনের সংবাদ পাচ্ছি, সংবাদের সত্যতা যাচাই করে ড্রেজার মেশিন নষ্ট এবং পাইপ কেটে ফেলছি। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও নজর দেয়া দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement