২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমতলীতে ২০ বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

আমতলী একে হাই সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন : নয়া দিগন্ত -

বরগুনার আমতলী উপজেলার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ ভবনে চার হাজার শিক্ষার্থী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। পর পর দুটি বিদ্যালয়ে ছাদের ভীম ধসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ক্লাস করতে পারছে না। অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না।
আমতলী প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত এবং ২০টি বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ। জরাজীর্ণ ভবনগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের কারণে জরাজীর্ণ ভবনগুলোতেই চলছে পাঠদান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চার হাজার শিক্ষার্থী জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মজিবুর রহমান সাতটি বিদ্যালয় ভবনকে পরিত্যক্ত ও ২০টি বিদ্যালয় ভবনকে জরাজীর্ণ ভবন ঘোষণা করেন। পরিত্যক্ত ভবনগুলোর পাশে টিনশেডের ঘর করে পাঠদান চালু রাখা হয়েছে।
যেসব বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত সেগুলো হলো গাজীপুর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আড়পাঙ্গাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাওড়া লোদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চরকগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণপূর্ব গুলিশাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গত ১ এপ্রিল পরিত্যক্ত ভবনগুলো অপসারণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান দরপত্র আহ্বান শেষে কার্যাদেশ দিয়েছেন। জরাজীর্ণ ভবনের বিদ্যালয়গুলো হলো উত্তর সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চন্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমতলী একে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব তারিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব তক্তাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর পশ্চিম চিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ঘোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব তারিকাটা এসটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম ঘটখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চুনা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুকুয়া হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চলাভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভায়লাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোন্তাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করায় অল্প দিনের মধ্যেই ভবনগুলো ভগ্ন দশায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের অর্থায়নে এসব ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনগুলোর ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। রড বেড়িয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। কক্ষের ভেতরের দেয়ালে ফাটল রয়েছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে।
৫৫ নং পশ্চিম আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী ইবাদ, আবদুর রব, আমেনা, রবিউল, জাহিদুল, ইশান ও নাবিয়া জানায়, প্রতিদিন ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে। এ জরাজীর্ণ ভবনে ক্লাস করার সময়ে আতঙ্কে থাকতে হয়, কখন আবার ছাদের পলেস্তারা ভেঙে মাথায় পড়ে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দ্রুত নতুন ভবন দেয়ার দাবি জানায়।
আমতলী একে হাই সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফখরুল শাহ আল আমিন বলেন, ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ঠাসাঠাসি করে পাঠদান করাতে হচ্ছে।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তার কাছে কোনো জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা দেয়নি।
আমতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিবুর রহমান জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদানের কথা স্বীকার করে বলেন, জরাজীর্ণ ভবনের তালিকা করে উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে জমা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, সাতটি পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ের ভবন অপসারণের জন্য দরপত্র আহ্বান শেষে কার্যাদেশ দিয়েছি। যারা ভবন অপসারণের কাজ পেয়েছে তারা দ্রুত কাজ শুরু করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement