২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুলাউড়ায় চা বাগানের জায়গায় পাকাঘর নির্মাণ চা চাষ সম্প্রসারণ বাধার মুখে

-

কুলাউড়া উপজেলার ঝিমাই চা বাগানের জায়গায় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে পাকাদালান ঘর নির্মাণ করছে খাসিয়ারা। এতে চা চাষ সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে প্রতিকার চেয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে ডিসির নির্দেশে শুনানি করে উপজেলা প্রশাসন। খাসিয়ারাদের বাগানের লিজভুক্ত জায়গায় পাকাঘর নির্মাণে নিষেধও করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ তোয়াক্কা না করে বাগানের অভ্যন্তরে ১২টি পাকা ঘর নির্মাণ করেছে খাসিয়ারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৬৬১ একর জায়গা সরকারের কাছ থেকে লিজ গ্রহণ করে ঝিমাই চা বাগান কর্তৃপক্ষ চা চাষ করে আসছে। কিন্তু বাগানের একটি অংশে খাসিয়ারা পান ও জুম করে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সম্প্রতি খাসিয়ারা ১২টি পাকা ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ঝিমাই বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবুল লাইছ তার কার্যালয়ে শুনানি করেন চলতি মাসের ৩ এপ্রিল। খাসিয়ারা শুনানিতে উপস্থিত হলেও তাদের পক্ষে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। অপর দিকে, বাগান কর্তৃপক্ষ সরকার থেকে প্রাপ্ত ২০৫২ সাল পর্যন্ত ৬৬১ একর জায়গার লিজের ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে। পরে ইউএনও খাসিয়াদের বাগানের জায়গায় সব ধরনের স্থাপনা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে পত্র প্রেরণ করেন।
সরেজমিন ঝিমাই চা বাগানে গেলে দেখা যায়, চতুর্দিকে চা বাগান। আর মাঝখানের টিলায় খাসিয়ারা বসতি স্থাপন করেছে। ৩২টি পরিবার বাগানের জায়গায় বসতি স্থাপন করে পান চাষ করছে। প্রথমে ফিল খাসিয়া নামক এক খাসিয়া বসতি স্থাপন করে। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে রানা সুরং পুঞ্জির হেডম্যানের দায়িত্ব নেন তিনি ও তার আত্মীয়-স্বজন মিলে সম্প্রতি ১২টি পাকাঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বাগান কর্তৃপক্ষ বাধা দিলে প্রথমে কাজ বন্ধ রাখলেও পরে আবার কাজ করতে থাকে খাসিয়ারা। এলাকাবাসী খাসিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বাগানের অভ্যন্তরে খাসিয়ারা দিনের পর দিন বসবাস করছে। বাগান কর্তৃপক্ষ ৬৬১ একর জায়গায় লিজ ফি, সরকারি ট্যাক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ট্যাক্স সবই বহন করে যাচ্ছে। এক সূত্রে জানা গেছে, খাসিয়ারা বাগানের ৬৬১ একর জায়গার মধ্যে ৩৭১ একর জায়গায়ই জবর দখল করে পানচাষ অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়; খাসিয়ারা পাহাড়ের জীববৈচিত্র ধবংস করছে। বিশেষ করে খাসিয়ারা চা বাগান ও বাগান সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকার গাছ কেটে সাবাড় করছে।
এ ব্যাপারে খাসিয়া হেডম্যান রানা সুরং কোনো কথা বলতে রাজি না হওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে পুঞ্জির অন্য খাসিয়ারা বলেন, তাদের বাপদাদারা অনেক আগ থেকে ঝিমাই পুঞ্জিতে বসবাস করছেন। তারা পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জীবনবৈচিত্র কিংবা গাছ গাছালি ধ্বংস নয়; রক্ষা করেই তারা বসবাস করছেন। আর বাগানের ভূমিতে বসবাসের বিষয়ে কোনো জবাব দিতে পারেনি খাসিয়ারা।
এ ব্যাপারে ঝিমাই চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান জানান, খাসিয়ারা সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আমাদের বাগানের জায়গায় বসতি স্থাপন করছে এবং এতদিন কাঁচা ঘরে বসবাস করলেও সম্প্রতি তারা পাকাঘর নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানোর পর প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও খাসিয়ারা তা মানছে না।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল লাইছ জানান, ঝিমাই চা বাগানের জায়গায় খাসিয়াদের পাকাঘর নির্মাণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত করে বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেছি। জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement