২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভারী যন্ত্রাংশ ক্রয়ে ১৪ কোটি টাকার অনিয়ম

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্রধান ভবন :নয়া দিগন্ত -

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারী যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে প্রায় ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা অনিয়মের ঘটনায় খবর প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। অপর দিকে সার্ভে কমিটির সদস্য তিন চিকিৎসকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে যন্ত্রাংশ বুঝে নেয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্ভে কমিটির চিকিৎসকের অভিযোগের পর ১১ এপ্রিল সিভিল সার্জন এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে গঠিত টিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সার্ভে কমিটির সদস্য সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: আসাদুজ্জামান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ডা: শরিফুল ইসলাম ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা: ফরহাদ জামিল সিভিল সার্জন বরাবর তাদের লিখিত অভিযোগে বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাসান মাহমুদের নেতৃত্বে একটি টিম ভারী যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে প্রায় ১৪ কোটি টাকা অনিয়মের ঘটনা তদন্তে গত ৯ এপ্রিল সরেজমিন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসে। তদন্তকালে জানা যায়, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর জন্য আনুমানিক ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল ক্রয়ের টেন্ডার কার্যক্রম এবং ওই মালামাল বুঝে নেয়ার জন্য গঠিত সার্ভে কমিটিতে স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। অথচ এ ধরনের কোনো কার্যক্রমে অফিসিয়াল কাগজপত্রে তারা স্বাক্ষর করেননি।
সিভিল সার্জন ডা: রফিকুল ইসলাম জানান, সার্ভে কমিটির সদস্য তিন চিকিৎসকের অভিযোগটি ১১ এপ্রিল অফিসিয়ালি হাতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ডা: এহেসেন আরাকে সভাপতি করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন ডা: হাফিজুল্যাহ ও ডা: জয়ন্ত সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিগত ১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিপুল এই যন্ত্রাংশ ক্রয়ের জন্য একটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরপর বিধিমোতাবেক ১৮ সালের ৮ জুলাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মার্কেনটাইল ট্রেড কোং সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের ভারী যন্ত্রাংশ সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। সেখানে মূল্য দেখানো হয় আট কোটি ৮৮ লাখ ৩১ হাজার ৬৮০ টাকা। এরপর ওই টেন্ডারের আওতায় বরাদ্দে পূর্ণাঙ্গ সরবরাহ না হওয়ার খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্তি অর্থ বরাদ্দ করা হয় আরো চার কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়ে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ কোটি ৮৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৮০ টাকা। পরে এই ১৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা মূল্যের ১২২টি যন্ত্রাংশ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের সার্ভে কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার মোতাবেক বরাদ্দকৃত ভারী যন্ত্রাংশ সদর হাসপাতালের সার্ভে কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিয়ে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, উল্লিখিত টেন্ডার কার্যক্রমের বিপরীতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের অপ্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রাংশ ক্রয় করা হয়েছে, যা হাসপাতালের গোডাউনে পড়ে আছে। তবে এসব যন্ত্রাংশ এই হাসপাতালে ব্যবহার উপযোগী নয়। এসব ক্রয়ের লক্ষ্য ছিল সাবেক সিভিল সার্জন ডা: তৌহিদুর রহমান, হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন ও স্টোরকিপার এ কে ফজলুল হকের তথাকথিক কমিশনবাণিজ্য করা। তবে সার্ভে কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, তারা এ ধরনের কোনো কমিটির সদস্য কখনো ছিলেন না বা এসব ভারী কোনো যন্ত্রাংশ বুঝেও নেননি। তারা এ সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেননি এবং এবিষয়ে কিছুই জানেনও না।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের স্টোর অফিসার ডা: জয়ন্ত সরকার জানান, বিতর্কিত এই বরাদ্দের কিছু কিছু পণ্য সিভিল সার্জন অফিসের স্টোরকিপার এ কে ফজলুল হক খাতা কলমে গ্রহণ করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। নানা অনিয়মের অভিযোগে দুদকের করা দু’টি মামলায় এর আগে ফজলুল হক কয়েকবার জেলে গেছেন। বর্তমানে সেসব মামলা বিচারাধীন আছে।
সাবেক সিভিল সার্জন ডা: তৌহিদুর রহমান ইতঃপূর্বে এসব মালামাল ক্রয়ে স্বচ্ছতা রয়েছে দাবি করে বলেন, বিধিমোতাবেক মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সবাইকে তো আর খুশি করা যায় না। চাকরিকালীন সময়ে হাসপাতালের কেউ কেউ আমার বিপক্ষে থাকায় আমার অবসরের পর তারা এখন ষড়যন্ত্র করছে।


আরো সংবাদ



premium cement