২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসময়ে ভাঙছে যমুনা : ৫০ বাড়ি ও ৩০ একর ফসলি জমি বিলীন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের চিতুলিয়া গ্রামে অসময়ে ভাঙছে যমুনা : নয়া দিগন্ত -

অবৈধভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় অসময়ে যমুনার পশ্চিম পাড়ের পাঁচটি গ্রামে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ক’দিনের ভাঙনে প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি ৩০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে জামে মসজিদ, কবরস্থান, মন্দির, প্রাথমিক বিদ্যালয়। যমুনার বুকে বিশাল চর জেগে ওঠায় নদীর স্রোতধারা সরাসরি পশ্চিম পাড়ে আঘাত হানছে। ভলগেট ও ড্রেজারের সাহায্যে নদীর পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় এই ভাঙন শুরু হয়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
যমুনার পশ্চিম পাড়ে পাবনার বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার দেওয়ান তারটিয়া, পাইখন্দ, চরপাইখন্দ ও চিথুলিয়া গ্রামে যমুনায় ভাঙন শুরু হয়েছে। যমুনা নদীর পশ্চিম পাড় ঘেঁষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বেড়ে যাওয়ায় স্্েরাতধারা সরে এসে পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর বুকে বিশাল চর জেগে ওঠায় পানিপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সরাসরি পশ্চিম পাড়ে আঘাত হানছে। এতে পশ্চিম পাড়ের পাঁচটি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে।
সরেজমিন ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় চিথুলিয়া গ্রামের লাল মিয়া, আফসার প্রামাণিক, ছালাম মেম্বর, আকবর প্রামাণিক, বুলবুলি, অর্চনা, রুবি, আলেক প্রামাণিক, সোরাব আলী, নওশের, ইয়াদ আলী, খোরশেদ আলীর সাথে। তারা জানান, গত ক’দিনের ভাঙনে তাদের বসতবাড়িসহ প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি, ৩০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুরনো বাঁধে ঠাঁই না হওয়ায় তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। চিথুলিয়া গ্রামের কাছে নির্মাণাধীন নতুন বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে যমুনা নদী মাত্র এক হাজার ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে নতুন বাঁধ ভাঙনের হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে পুরনো বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের আংশিক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধে আশ্রিত পরিবারগুলোর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
চরপেঁচাকোলা গ্রামের মাওলানা সোবহান, ডাক্তার চাঁদ আলী সরদার, রুস্তম সরদার, গোলাম মোস্তফা, আনিছুর রহমান, আরোঙ্গজেব, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দাস, শিক্ষক মিনহাজ উদ্দিন, শিক্ষিকা নাসরিন পারভীনসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, চরপেঁচাকোলা ও চিথুলিয়া গ্রামের কোল ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার নেতৃত্বে একটি চক্র ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। ফলে এই শুষ্ক মওসুমেও নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য মানববন্ধন ও প্রসাশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম জানান, গত ক’দিনের ভাঙনে দেওয়ান তারটিয়া গ্রামের আংশিক, পাইখান্দ গ্রামের ১০টি বাড়ি, চক পাইখান্দ গ্রামের ১৫টি বাড়ি, একটি জামে মসজিদ ও একটি কবরস্থান এবং চিথুলিয়া গ্রামের ১২টি বাড়ি, শতাধিক বিঘা ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য মোছা: আলেয়া খাতুন জানান, চিথুলিয়া গ্রামের একমাত্র মন্দিরটি যেকোনো সময় নদীতে ভেঙে যেতে পারে। ভাঙনকবলিত গ্রামগুলোতে প্রায় ৬০০ পরিবারের বসবাস ছিল। ভাঙন আতঙ্কে গ্রামের বাসিন্দারা ভিটাবাড়ি থেকে ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে ভয়াবহ নদীভাঙনে তার বাড়িসহ গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়ি, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৫০০ একর জমি বিলীন হয়ে যায়। কয়েক দিনে এ গ্রামের প্রায় ৩০ বিঘে ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কবরস্থান ও মাদরাসা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ জানান, চরপেঁচাকোলা ও চিথুলিয়া গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙনরোধ কাজের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হলেই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement