১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় যমুনা ও ইছামতিতে মাছের আকাল

যমুনা থেকে আহরিত দেশী প্রজাতির বিভিন্ন মাছ :নয়া দিগন্ত -

এক সময়ের মাছের খনি নামে পরিচিত যমুনা-ইছামতি নদীর পাশের এলাকার বাসিন্দারা রসনাতৃপ্ত পাঙ্গাশ ও বাঘাআইড় মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছেন। যমুনার ৩০ থেকে ৪০ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ আর ৮ থেকে ১০ মণ ওজনের বাঘাআইড় মাছের কথা এখন চিন্তাই করা যায় না।
যমুনা ও ইছামতিতে পানিপ্রবাহ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ফলে জেলেদের অভাবনীয় দুর্দিন চলছে। বর্ষা মওসুমের তুলনায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশ। এতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় তিন হাজার জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকা। ফলে অনেকেই এ পেশা বদলের চিন্তা করছেন। এ অবস্থায় সুশীলসমাজের পক্ষ থেকে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে যমুনা ও ইছামতি নদী খননের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তারা বলেছেন, বাঁধ ও তীর সংরক্ষণের মতো নদীশাসন প্রকল্প নিয়েই শুধু পড়ে থাকলে হবে না। মৎস্যসম্পদ রক্ষাসহ নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রাখতে হলে যমুনা ও ইছামতি খননকাজও জরুরি হয়ে পড়েছে।
মৎস্য অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা ও ইছামতিতে প্রায় তিন হাজার জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব জেলের মধ্যে ১ হাজার ৭৭০ জন সরকারিভাবে নিবন্ধিত এবং বাকি প্রায় দেড় হাজার জনের নিবন্ধন এখনো হয়নি। যমুনা-ইছামতিতে বছরে ৬৯২ মে. টন মাছ পাওয়া যায়। বর্ষা মওসুমে পাওয়া যায় ৪২০ মে. টন, শুষ্ক মওসুমে উৎপাদন হয় ২৭২ মে. টন উৎপাদন হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পানিপ্রবাহ সবচেয়ে কম থাকায় মাছের উৎপাদন আরো কমে যায়। যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকার জেলেরা জানিয়েছেন, বর্তমানে নদীর অনেক স্থানে জাল ফেলার মতো পানি নেই। নাটুয়ারপাগড়া জেলে পল্লীর বাসিন্দা গৌতম, লিটন আক্ষেপ করে বলেন, যে দুই-এক জায়গায় পানি আছে, সেখানে জাল ফেললে ৫০০ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। বরইতলী পল্লীর বাসিন্দা বিমল, চিত্তরঞ্জন জানান, কাক্সিক্ষত মাছ না পাওয়ায় তারা বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় জেলেদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে তাদের দুর্ভোগ-দুর্দশা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
কাজিপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল হাসান জানান, পানির অভাবে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের নদীর স্বল্প পানিতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শুষ্ক মওসুমের তিন থেকে চার মাস খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। জেলেরা জানিয়েছেন, খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে যে পুঁজির দরকার, সরকারিভাবে তা পাওয়া না গেলে তাদের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে পেশা পরিবর্তন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, শুষ্ক মওসুমে যেন কর্মহীন থাকতে না হয় সে জন্য নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নদীর যে অংশে পানি আছে সেখানে নেই দিয়ে ১০০ বর্গফুট (১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ) এলাকা ঘিরে খাঁচা তৈরি করে তাতে মাত্র ৪ মাসে ১২ প্রজাতির মাছ চাষ করা সম্ভব।
জেলেদের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। মাছের পোনা কোথায় পাওয়া যাবে সেটাও আমি তাদের জানিয়েছি। একটি খাঁচায় চার মাসে মাছ চাষ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। যদি কেউ আগ্রহী হয় তাহলে আমরা তাদের প্রক্রিয়াগত সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। মৎস্য অফিসের খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদোগ্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমল নামে এক জেলে বলেন, খাঁচা পদ্ধতি ভালো। কিন্তু সেটা তৈরি করতে এবং মাছের পোনা কিনতে তো টাকা লাগবে। তা কে দেবে। যদি সরকারিভাবে ঋণ দেয়া হতো তাহলে আমরা সুবিধা পেতাম।
জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন আরচেসের সমন্বয়ক রবিউল আওয়াল বলেন, নদীর নাব্য ফেরানোর পরিকল্পনা না নিলে চরাঞ্চলে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। তাই বাস্তবমুখী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা জরুরিভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞমহল তাদের সুচিন্তিত মতামতে ব্যক্ত করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল