১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৮৭টি প্রকল্পে বরাদ্দ সাড়ে ১৬ কোটি ধর্মপাশায় ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম

অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না পিআইসি
-

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার হাওরে সীমাহীন অনিয়মের মাধ্যমে চলতি বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। সময়সীমার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও এখনো কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। এখনো অনেক বাঁধের অর্ধেক কাজও করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসির)। হাওরে হাওরে চলছে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা। ফসলরক্ষা বাঁধ যেন লুটপাটের এক নতুন ক্ষেত্রে যোগ হচ্ছে। দায়সারাভাবে কাজ করে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা লুটপাটের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে পিআইসিরা। বেশির ভাগ হাওর বাঁধের ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে হাওর বাঁধ মেরামতে পিআইসিদের নীতিমালা লঙ্ঘন ও সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি।
উপজেলা প্রশাসন ইউএনও ও এসিল্যান্ড বাঁধ মেরামতের কাজে দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও দায়িত্ব পালনে উদাসীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলীরা। বাঁধ মেরামতে অনিয়মের বিষয় জানানোর চেষ্টা করা হলে কর্ণপাত না করে উল্টো পিআইসিদের পক্ষ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব। তবে বাঁধে দুর্মুজ ব্যবহার করা হয়নি এমন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সব বাঁধে দুর্মুজ ব্যবহার করা হচ্ছে না তা সঠিক নয়। যে সব বাঁধে দুর্মুজ ব্যবহার করা হচ্ছে না, তা জানানোর জন্য বলেন তিনি। সম্প্রতি কাইলানী হাওরের ৫১ নম্বর প্রকল্পের টঙ্গীর বাঁধটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ। এ বাঁধ ভেঙে গেলে ধর্মপাশা উপজেলার গুরমার হাওর ও পাশের কয়েকটি হাওরের বোরো ফসলসহ পাশের নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার হাজার হাজার একর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। হাওর রক্ষা বাঁধের উপসহকারী প্রকৌশলীকে (এসও) সামনে রেখে বাঁধের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক দুর্মুজ ব্যবহার না করে কোদাল দিয়ে বাঁধের ওপরের মাটি সমান করতে দেখেন কৃষকরা। উপস্থিত থাকা এসওকে বিষয়টি জানানোর পর শ্রমিকদের দুর্মুজ মারার কাজে লাগান তিনি। এ রকম উদাসীনতা ও কর্তব্যে অবহেলার কারণেই দায়সারাভাবে কাজ করছে পিআইসিরা। ফলে বাস্তবে প্রশাসনিক কঠোরতার কোনো সাফল্য দেখা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ প্রকল্পে বাঁধের একেবারে কাছে থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এর আগেও এরকম অনিয়ম হয়েছে এসব প্রকল্পে। এভাবে বছরে বছরে একই স্থানে বাঁধের একেবারে গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করার কারণে বাঁধের পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। মেজারমেন্ট ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করে উপজেলার সব ক’টি বাঁধের মেরামত কাজে নীতিমালা লঙ্ঘন ও সীমাহীন অনিয়ম চলছে বলে জানান কৃষকরা। বাঁধের অতি কাছে থেকে মাটি উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না, দুর্মুজ ব্যবহার হচ্ছে না মোটেও। বাঁধের কাজে অনিয়মের কারণে ও কাজ সময়মতো আদায় করার জন্য বেশ কিছু পিআইসি সভাপতিকে শোকজ করেছন ও দণ্ড দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। এরপর কোনো অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না।
কাবিটা-কর্মসূচির নীতিমালা অনুযায়ী হাওরে বাঁধ নির্মাণের ধারে কাছেও থাকছে না পিআইসিরা। ২০১৮-২০১৯ চলতি অর্থবছরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ধর্মপাশা উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজের জন্য ৮৭টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সরেজমিনে উপজেলার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বাঁধেই এস্কেভেটর মেশিনের ড্রাইভারকে ছাড়া পিআইসির কোনো সদস্যকে উপস্থিত দেখা যায়নি। বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে চুুুুক্তিবদ্ধ হয়ে এস্কেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে কিছু পিআইসি। এসব বাঁধে নিয়মের মধ্যে কাজ করার কোনো সুযোগই থাকছে না। বাঁধের পাশে মেশিন বসিয়ে কাছে থেকে মাটি উত্তোলন করে স্তূপাকারে মাটি ফেলে ড্রাইভারের ইচ্ছেমতো কাজ হচ্ছে। দুর্মুজ মারা, প্রকল্পস্থানে দুর্বা লাগানো, ঘাস পরিষ্কার করা, বালু মাটি বা এটেল মাটি দিয়ে কাজ হচ্ছে কি না তা দেখার কোনো সুযোগ থাকছে না পিআইসিদের। এস্কেভেটর দিয়ে কম সময়ে কম খরচে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার জন্য পিআইসিরা এই পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন বলে কৃষকরা জানান। কাইলানি হাওরের ৫২ নম্বর পিআইসি সভাপতি মো: মোস্তফা এ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজের জন্য ১১ লাখ টাকায় এক্সেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে চুক্তিতে দেয়া হয়েছে বলে কৃষকদের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। গুরমার হাওরের ৬৫ নম্বর প্রকল্পের কাজে ১৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পিআইসি সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান নিজেই জানিয়েছেন এস্কেভেটর মেশিনের ঠিকাদারকে প্রকল্পের মাটির কাজ ১৪ লাখ টাকায় চুক্তিতে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে হাওরের দায়িত্বে থাকা এসও মাহমুদুল ইসলাম অবগত আছেন বলেও জানান তিনি। অবশ্য এসও মাহমুদুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। আরো কম টাকায় এ বাঁধের মাটির কাজ চুক্তিতে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষকদের নিকট জানা যায়। এমনিভাবে কাজ কম করে বরাদ্দের টাকা লুটপাটের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন পিআইসিরা। এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, প্রতিটি বাঁধে যাব। পরিদর্শন করে বাঁধের কাজে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ডিভিশন-১, আবুবকর সিদ্দিক ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার মিলান-লিভারপুলের বিদায়, সেমিফাইনালে আটলন্টা-রোমা

সকল