২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চৌহালীতে প্রসেস মিলের বর্জ্যে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ

এক গ্রামেই ১১টি সুতা প্রসেস মিল ও ডাইং কারখানা
চৌহালীর খামার গ্রামে ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য পাইপের সাহায্যে ফসলের মাঠে ফেলা হচ্ছে :নয়া দিগন্ত -

পাবনার চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের খামারগ্রামে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে ১১টি সুতা প্রসেস মিল ও ডাইং কারখানা। এসব কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক মিশ্রিত বিষাক্ত তরল বর্জ্য পরিশোধন না করে পাইপের সাহায্যে যমুনার একটি শাখা নদীতে ফেলা হচ্ছে। সেখানে কৃষকেরা ধানের আবাদ করেছেন। ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে যাওয়া সরু নালা হয়ে বিষাক্ত তরল বর্জ্য যমুনা নদীতে পড়ছে। কারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যরে পচা দুর্গন্ধে খামারগ্রাম, বেতিলসহ কয়েকটি গ্রামে বাসবাসকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ পথে পথচারীদের নাকে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, প্রসেস ও ডাইং কারখানার মালিকরা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বা বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপন করেননি। তারা পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর সুতা প্রসেস ও রঙের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে খামারগ্রামে রহমান হাজীর ফিরোজা প্রসেস মিল, ইসলাম হাজীর ফিরোজা প্রসেস মিল, রফিকুল ইসলাম সেনার প্রসেস মিল, জাদুকর ছালামের প্রসেস মিল, ডায়না প্রসেস মিল, মনির ডাইং কারখানা, লাবু হাজীর প্রসেস মিল ও বেতিলের গনির ফিরোজা প্রসেস মিলসহ প্রায় ১১টি প্রসেস মিল অ্যান্ড ডাইং কারখানা গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া একই উপজেলার তাঁত শিল্পসমৃদ্ধ এনায়েতপুরে কয়েকটি সুতা রঙের কারখানায় সুতা মার্চরাইজ ও রঙ করা হচ্ছে। মার্চরাইজ ও সুতা রঙের কাজে এসিড, কস্টিক সোডা, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সুতা মার্চরাইজ ও সুতা রঙের কারখানায় তরল বর্জ্যরে তীব্র পচা গন্ধ বাতাসে মিশে এলাকার জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুতা প্রসেস অ্যান্ড ডাইং কারখানায় কেমিক্যাল বর্জ্য পরিশোধনাগার ইটিপি নেই। নেই বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নেই কোনো সংরক্ষিত হাউজ। প্রসেস মিলের বয়লার ও ডাইং কারখানা থেকে পাইপের সাহায্যে দূষিত তরল বর্জ্য নির্গত হয়ে ধানের ক্ষেতের মাঝে যমুনা নদীর শুকিয়ে যাওয়া একটি শাখায় পড়ছে। সেখানে কৃষকেরা ধানের আবাদ করেছেন। শাখা নদীর পূর্বপাড়ে বেতিল ও পশ্চিমপাড়ে খামার গ্রাম। ধানক্ষেতের মাঝের নালা হয়ে বিষাক্ত তরল বর্জ্য যমুনা নদীর পানিতে মিশছে। এতে নদীর স্বচ্ছ পানি বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। অনেকেই নিরূপায় হয়ে ওই পানি ব্যবহার করায় তারা চর্মরোগ, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারখানার পাশের খালেও রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। ওই বর্জ্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে গিয়ে মিশছে। ফলে এলাকার বেশ কিছু অগভীর নলকূপে দুর্গন্ধযুক্ত পানি উঠছে। এ ছাড়া খালের আশপাশের গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারজনিত ধোঁয়ায় কারখানাগুলোর পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরের চালের টিনে হলদে আবরণ পড়ছে।
খামারগ্রামের কলেজছাত্র ইউসুফ আলী জানান, তার বাড়ির পাশে সুতা প্রসেস কারখানা থাকায় তাকে বিষাক্ত পরিবেশে বসবাস করতে হচ্ছে। তরল বর্জ্যরে ঝাঁজালো দুর্গন্ধে বাতাসে এলাকার পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। আবার কারখানা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকেই তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালী কারখানার মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এসব প্রসেস মিল ও ডাইং কারখানা। এলাকার সচেতন মহল অবিলম্বে এসব কারখানা জনবসতিহীন এলাকায় স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বলেন, প্রসেস মিলের কেমিক্যাল বর্জ্য যমুনা নদীতে ফেলায় নদীর পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্রসেস মিল মালিকরা পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা করলে এবং নির্দিষ্ট স্থানে পুকুর খনন করে সেখানে বর্জ্য নিষ্কাশন করলে দূষণের কবল থেকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাবে তেমনি প্রসার ঘটবে এলাকার তাঁতশিল্পের।
ফিরোজা প্রসেস মিলের মালিক ইসলাম হাজী জানান, তার কারখানায় ইটিপি স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তার কারখানার তরল বর্জ্য নিরাপদ স্থানে ফেলা হচ্ছে। এতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।
চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: এস এম মাসুম জানান, কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে টিউবওয়েলের পানিতে কলিফর্ম নামক জীবাণু জন্মায়। এই পানি খাওয়ায় এলাকার মানুষ চর্মরোগ ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের রোগসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চৌহালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জেরিন আহমেদ জানান, প্রসেস মিলের তরল বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যরে কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসলের চারা বড় হওয়ার আগেই কালচে রঙ ধারণ করে মরে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগস্ত হচ্ছেন।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু তাহির জানান, তিনি চৌহালীতে সবেমাত্র যোগদান করেছেন। তিনি প্রসেস মিল অ্যান্ড ডাইং কারখানাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেন। যদি দেখা যায় কারখানাগুলোর কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে হিট স্ট্রোকে মরিচ ব্যবসায়ীর মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ৬ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন রায়গঞ্জে পাটভর্তি ট্রাকে আগুন জামালপুরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আসন বিন্যাস প্রকাশ ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

সকল