২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরগুনায় ৪০ ইটভাটায় করাতকল

বনের গাছ কেটে সাবাড়
বরগুনার একটি ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে গাছ কাটা হচ্ছে :নয়া দিগন্ত -

বরগুনা জেলার ছয়টি উপজেলা বরগুনা, আমতলী, বামনা, বেতাগী, পাথরঘাটা ও তালতলীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। অবৈধ ইটভাটায় বসানো হয়েছে করাতকল, আর এসব করাতে বনের গাছপালা উজাড় করে কেটে টুকরা করা হচ্ছে। আইন ও নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এ করাতকল বসানো হয়েছে। এমনকি ভাটামালিকেরা অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নদী রক্ষাবাঁধের মাটি কেটে নিচ্ছেন দেদার। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের সাথে আঁতাত করেই ইটভাটার মালিকেরা এসব অবৈধভাবে ইটভাটা ও করাতকল নির্মাণ করেছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
বরগুনা জেলা প্রশাসক দফতর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় ৪০টি ইটভাটা রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে গেছে, বরগুনা শহরের উপকণ্ঠ লাকুরতলা, ফুলতলা আবাসন, সদরের এম বালিয়াতলী, নলটোনা ও বরগুনা-আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সাতটি ইউনিয়নে ১১টি ড্রাম চিমনি ইটভাটা। আমতলী সদর ইউনিয়নের নাচনাপাড়ায় এমসিকে, চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়ায় জেবিবি, চন্দ্রায় এইচএলবি, পাতাকাটায় এইচবিএম, তালুকদার বাজারে এইচআরটি, কুকুয়া ইউনিয়নের রায়বালায় বিবিসিকো, হাজারটাকার বাঁধে এনবিএল ও কৃষ্ণনগরে এএমবি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটাগুলোর মালিকেরা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে করাতকল বসিয়ে গ্রাম ও বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এনে করাতকলে কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছে। এতে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে গ্রাম ও বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বিঘিœত হচ্ছে পরিবেশ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হয়ে গাছপালা মরে যাচ্ছে। বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে ইটভাটাসংলগ্ন গ্রামগুলো। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে এভাবে ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছে। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
কৃষিজমি ও পরিবেশ রক্ষায় ফসলি জমিতে ইটভাটা না গড়ার আইন থাকলেও অবৈধ ইটভাটা মালিকেরা তা মানছে না। বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে পরিবেশ অধিদফতর, কৃষি অফিসের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ছাড়া ২৭টি ঝিকঝ্যাক, ড্রাম চিমনি (ব্যারেল) ও পাজা ইট পোড়ানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ১২০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সালের ৬ ধারায় উল্লেখ আছেÑ কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবে না। এ ধারা লঙ্ঘন করে ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৮ ধারায় আরো উল্লেখ আছে ‘আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপন করতে পারিবে না।’ এ ধারা লঙ্ঘন করে ইটভাটা স্থাপন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের লোকজনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে ইটভাটা স্থাপন করে ইট পোড়াচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর আইন অমান্য করে ভাটার ভেতরে স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।
সরেজমিন দেখা গেছে, চন্দ্র গ্রামে এইচএলবি, কাউনিয়া গ্রামে জেবিবি ও রায়বালা গ্রামে বিবিসিকো ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর আইন ভেঙে ভাটায় ভেতরে করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার গাছপালা কালচে হয়ে গেছে। দেদার করাতকলে কাঠ কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছে।
ওই ইটভাটার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কে কী করবে। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগের লোকজন এসে টাকা নিয়ে যায়। তাদের টাকা দিলে কোনো কিছুরই প্রয়োজন হয় না। তারা আরো বলেন, প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও বন বিভাগ ব্যবস্থা নিলে ইটভাটায় এভাবে কেউ কাঠ পোড়াতে পারে না।
গাজীপুর গ্রামের সোহেল রানা, কাউনিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম ও চন্দ্রা গ্রামের এমাদুল ইসলাম জানান, ইটভাটার মধ্যে করাতকল বসিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ইটভাটায় পোড়াচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় বাড়িতে বসবাস করতে সমস্যা হচ্ছে। তারা আরো জানান, অবৈধভাবে এভাবে ইট পোড়ালেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের লোকজন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিভিন্ন দফতর থেকে লোকজন এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। এ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয় না।
চাওড়া চন্দ্র গ্রামের এইচএলবি ইটভাটার মালিক মো: হারুন অর রশিদ ইটভাটায় করাতকল বসানোর কথা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসনের লোকজন ইটভাটায় এলেও তারা করাতকল সরাতে বলেনি। আমতলী বন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান আকন বলেন, ইটভাটায় করাতকল বসিয়ে কাঠ কাটায় বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। দ্রুত করাতকল উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বরগুনায় ৩০টি অবৈধ ড্রাম চিমনি ইটভাড়া রয়েছে। ওই ইটভাটাগুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রসাশক মো: কবির মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, অবৈধ ইটভাটা ও করাতকল বসানো মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক ইটভাটায় অভিযান করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু তানজানিয়ায় বন্যায় ১৫৫ জনের মৃত্যু বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৩ দেশে কাতার আমিরের সফরে কী লাভ ও উদ্দেশ্য? মধুখালীর ঘটনায় সঠিক তদন্ত দাবি হেফাজতের ফর্মে ফিরলেন শান্ত

সকল