লালমোহনের বেতুয়া খালের পানি শুকিয়ে চৌচির
খনন করার দাবি এলাকাবাসীর- মাকসুদুর রহমান পারভেজ লালমোহন (ভোলা)
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
দ্বীপজেলা ভোলার লালমোহনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা বেতুয়া নদী এখন মরা খাল। ভোলাবাসীর অনেক স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রমত্তা বেতুয়া খালের পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বেতুয়ার দুকূলের বসবাসরত হাজারো কৃষিজীবীদের, এ বেতুয়ার পানি সেচের মাধ্যমে কৃষকরা এই শুষ্ক মওসুমে ইরি ও বোরো ধান চাষ করত কিন্তু বেতুয়ার পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা আর এসব ধান চাষ করতে পারছেন না, এ মওসুমে ভোলার দক্ষিণাঞ্চলের ইরি ও বোরো ধান দেশের বেশি ভাগ খাদ্য চাহিদা মেটানোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু খাল শুকিয়ে যাওয়ার কারণে কৃষকরা আর সেই চাহিদা মেটাতে পারছেন না। সবেতুয়ার পানিতে ভেসে গেছে কত জমি, ভিটেমাটি, ঘরবাড়ি, ফসল। ধলীগৌরনগরের হকু বেপারির মহিষ, আব্দুল আলী, সিরাজ ও ছিদ্দীক প্রমুখ এবং নাম না জানা অনেক মানুষ মারা যান এ নদীতে। বেতুয়ার ভাঙনে বিলীন হয়েছে কত জীবন, সর্বস্ব হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে কত মানুষ। কত নৌকা ডুবেছে বেতুয়ার জলে। এসবের কোনো ইয়ত্তা নেই। এতসব হিসাব কে আর করে। কালের আবর্তনে, মহাকালের ঘূর্ণিপাকে বিলীন হয়ে গেছে বেতুয়া নদী।
ভোলা জেলার এক প্রান্তের খবরাখবর অপর প্রান্তে বেতুয়া নদীর উত্তাল তরঙ্গে ভেসে পৌঁছানো হতো লঞ্চ, গয়না ও ট্রলারের মাধ্যমে। বেতুয়ার বুকে মাছ ধরে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করত। বেতুয়া নদীতে কুমির ছিল। বেতুয়া এখন শুধুই স্মৃতি! শুধুই মরা খাল। অনেক স্থানে এখনো মরা নদী বেতুয়ার স্মৃতি রয়ে গেছে। লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ এলাকায় বেতুয়া বাঁধ, স্লুইস ও খাল রয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ও লালমোহনের ধলীগৌরনগর, রমাগঞ্জ, লর্ড হার্ডিঞ্জ এলাকায় বেতুয়া খাল রয়েছে। এর দুই তীরে কৃষকরা ইরি ও বোরো ধান চাষ করত বেতুয়ার পানি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু এখন আর ওইভাবে আর চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। বর্ষার পর শুষ্ক মওসুমে বেতুয়া শুকিয়ে যায়। ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে মরা নদী বেতুয়ার স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে।
বেতুয়া নদী যেন ভোলা দ্বীপের রুপকথা। আগে মেঘনা আর পশ্চিমে তেতুলিয়া নদীর মধ্যে খবরাখবর আদান-প্রদান করা সংযোগ স্থাপনকারী বেতুয়া নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীর বুকে ভূখণ্ডে এখন ফসল ফলে, বাতাসে দোল খায়। গড়ে ওঠেছে বসতি।
প্রজন্মের কাছে বেতুয়া নদী এখন রূপকথার গল্পের মতো। অনেকেই ভুলে গেছে বেতুয়া নদীর নাম। ১৯৪০ সালে মেঘনার মোহনা বন্ধ করে দেয়ার কারণে স্রোতহীন হয়ে পড়ে বেতুয়া নদী এবং আস্তে আস্তে মরে যায় এ নদীটি। খরস্রোতা মেঘনা নদী থেকেই বেতুয়া নদীর সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করেন এ অঞ্চলের মানুষ।
বেতুয়া নদীর বুকে নৌকা ভাসিয়ে মাঝিমাল্লারা ভাটিয়ালি গাইত। দূর-দূরান্তের হাটবাজার যেমন পটুয়াখালীর কালাইয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল আনানেয়া করত। ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি কাজে তখন বেতুয়ার পানি সেচ দেয়া হতো। তখন বিশুদ্ধ পানির খুব অভাব ছিল। ভাটা জোয়ারের বেতুয়া নদীর পানি খুব সুস্বাদু ছিল।
১৯৪০ সালের দিকে খরস্রোতা বেতুয়ার বাঁধ দিতে গিয়ে অনেক শ্রমিক মারা যান। কয়েক বছর লেগেছে এ বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ করতে। লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া স্লুইস ঘাটে গেলে দেখা যায় এ বাঁধের ওপর পাকা রাস্তা করা হয়েছে। বেতুয়াকে স্থানীয় লোকমুখের ভাষায় বেউত্তার খাল বলা হয়। সত্যি বেউত্তা অনেক স্মৃতিময়।
মরে যাওয়ার পর বেতুয়া নদীর যেটুকু অস্তিত্ব আছে, তা খনন করার দাবি করেছেন বেতুয়ার দুই তীরের হাজার হাজার বসবাসরত জনগণের। এটাই উপজেলাবাসী ও সচেতন মহলের প্রাণের দাবি। এ ব্যাপারে লালমোহন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইঞ্জিনিয়ার মো: কায়সার বলেন, আমরা বেতুয়ার খাল (সাবেক নদী) খননের ব্যাপারে প্রকল্প আকারে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা