১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গোমস্তাপুরে ফুটতে শুরু করেছে আমের মুকুল

-

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের সাথে সাথে আমের স্বর্ণালী মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে উঠছে আমচাষিদের স্বপ্ন। মুকুলের বাহারি রং আর মন মাতানো গন্ধে মৌ মৌ করছে বাগানগুলোর আশপাশের এলাকা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের আমচাষি ও বাগান মালিকেরা ধারণা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।
একাধিক আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের সারি সারি গাছে আমের মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর আমের ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল ফুটেছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। গাছের পুরো মুকুল ফুটতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে বলে জানান বাগান মালিকেরা। গত বছর স্মরণকালের সবচেয়ে কম দামে আম বিক্রি হয়েছে। ফলে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের। তবে এ বছর লাভবান হওয়ার আশায় বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষিরা।
কৃষি বিভাগ ও আম চাষিরা বলছেন, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের ভালো ফলন হবে। মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করছেন বাগানের মালিক ও চাষিরা।
জানা গেছে, উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রায় সব জাতের আমের উৎপাদন হয়। লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর কৃষি জমিতে বাড়ছে আমের আবাদ। আম্রপালি, ফজলি, খিরসাপাতি, ল্যাংড়া, রাজভোগ ও গোপাল ভোগসহ বিভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। তথ্য মতে, দেশের বেশির ভাগ আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলার উৎপাদিত আম দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করার পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে।
স্থানীয় কাঞ্চনতলার আম ব্যবসায়ী আবদুর রাকিব জানান, প্রায় দুই সফতাহ আগে থেকে বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। মুকুল আসার পর থেকেই গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছি। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বালাইনাশক ¯েপ্র করছেন। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। এ অবস্থা থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
রহনপুরের আম সমিতির নেতা বাবলু জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে গোমস্তাপুরের আম সবচেয়ে মিষ্টি। রহনপুর আড়তে সবচেয়ে মানসম্মত আম বিক্রি হয়। এখানকার মাটি ও পরিবেশের কারণে দেশব্যাপী এ আমের খ্যাতি রয়েছে। এখানকার আমের সুনামের কারণে বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা অন্যান্য জেলার আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে বিক্রি করেন। তবে গত ২৭ জানুয়ারি ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাতি আম’ জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এ বছর আমের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান আছে ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে, আর আমগাছ আছে প্রায় ২০ লাখ।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শফিকুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ থেকে গাছে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। মূলত আবহাওয়ার কারণে দেশীয় জাতের গাছে আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। এ বছর শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব কম থাকায় ১৫ দিন আগেই গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে এবং রোগ বালাই গত বছরের তুলনায় কম হবে বলে মনে করছেন এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: মঞ্জুরুল হুদা বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য মতে জেলার ৩০ শতাংশ আমগাছে মুকুল এসেছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন।

 


আরো সংবাদ



premium cement