১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুয়াকাটার ‘ইলিশ পার্ক’ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে

কুয়াকাটা ইলিশ পার্ক : নয়া দিগন্ত -

৭২ ফুট লম্বা বিশাল ইলিশ। সূর্যের আলোতে মাছের শরীর চিক চিক করছে। লেকের পাশে রাখা মাছটি দেখে উড়ছে সাদা বক। বিশাল এই মাছটির আকর্ষণে ধেয়ে আসছে সিংহ ও বাঘ। বাঘ ও সিংহের ধেয়ে আসা দেখে ছুটছে ক্যাঙারু, হরিণ, বানরসহ বনের পশুপাখি। ঠিক এমনই ফাইবার ও সিমেন্টের তৈরি বন্য জীবজন্তুর ভাস্কর্য ও লাইফ এনিমেল নিয়ে কুয়াকাটায় পর্যটকদের বিনোদনের জন্য তৈরি হয়েছে ‘ইলিশ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট’।
কুয়াকাটা জিড়ো পয়েন্ট থেকে এক কিলোমিটার দূরের এই ইলিশ পার্ক দেখতে এখন ছুটে আসছেন দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শিশু-বৃদ্ধদের কাছে পার্কটি অন্যতম আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
প্রায় এক বিঘা জমির ওপর গহিন বন্য প্রকৃতির আদলে তৈরি ইলিশ পার্কের মূল আকর্ষণ ৭২ লম্বা বিশাল ইলিশের পেটের মধ্যের রেস্টুরেন্ট। এই রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা হবে শুধুই সি-ফিস। বিলুপ্ত প্রায় সামুদ্রিক মাছ পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে তৈরি করা হয়েছে মৎস্য জাদুঘর। উপকূলীয় এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রাখাইন সংস্কৃতি পর্যটকদের জন্য কাছে তুলে ধরতে রয়েছে ফটোগ্যালারি।
ইলিশ পার্কের চার দিকের লেকের মধ্যে ২২ ফুট লম্বা একটি সাম্পান তৈরি করা হয়েছে। এই সাম্পান আসলে একটি মঞ্চ। যেখানে হয় উপকূলীয় রাখাইন ও বাঙালি হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিশুদের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশুদের রাজ্য ও ভুতের বাড়ি নামে দু’টি পার্ক। এখানে রয়েছে খেলার বিভিন্ন সামগ্রী ও ছবি তোলার জন্য মজার মজার পুতুল ও বন্য পশুপাখি। সবুজে ঘেরা এই ইলিশ পার্ক দিনের আলোতে উপভোগের জন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বন্যজগৎ তৈরি করা হয়েছে। আর রাতের অন্ধকারে পার্কটি লেজার শো ও রঙ-বেরঙের আলোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একটি আধুনিক দ্বীপের আদলে।
ইলিশ পার্ক ঘুরে দেখা যায়, পার্কের চার দিকে ঘেরা লেকে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের চাষ করা হয়েছে। পর্যটকদের অবসর সময় কাটানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে আদিম আদলের কটেজ। লেকের পাশে তৈরি করা হয়েছে ছনের তৈরি পাঁচটি সেট ঘর। কাঠ, বাঁশের তৈরি এ সেট ঘরে খাবার পরিবেশনের ট্রে যেমন তেরি করা হয়েছে পাতা দিয়ে, চেয়ার তৈরি করা হয়েছে গাছের শেকড় ও গাছের ছালসহ খণ্ড দিয়ে। খাবার সরবরাহ করা হয় মাটির পাত্র ও কলাপাতায়। এই সেট ঘরের দুই পাশে বসানো হয়েছে ফাইবার ও সিমেন্টের বাঘ, সিংহ, হাতি, বানরের ভাস্কর্য। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবই জীবন্ত। যেন ধেয়ে আসছে তাদের দিকে। মাঠের বাগানে বসিয়ে রাখা হয়েছে হরিণ ও হরিণের বাচ্চা, ব্যাঙ, খরগোশ ও কচ্ছপ। দেখলে মনে হয় এগুলো যেন বাগানে ছোটাছুটি করছে। এ মাঠে তৈরি করা হয়েছে গহিন অরণ্যের আদলে বাগান। যেভাবে রোপণ করা হয়েছে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির বিভিন্ন গাছ। কোনো অনুষ্ঠানে এই বাগানে যাতে একসাখে ৫০-৬০ জন মানুষ বসতে পারে তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পার্কে ঘুরতে এসেছেন ঢাকার মিরপুরের সাইয়ান আরমান-তাথৈ দম্পতির সাথে তাদের দুই সন্তান পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া আনিকা ও নবম শ্রেণীতে পড়–য়া সাইরাজ। তিন ঘণ্টা পার্কে ঘুরে বেড়ানোর পরও এই তাদের যেন ঘোর কাটছে না। সাইয়ান আরমান বলেন, কুয়াকাটায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা ছাড়া তারা আর কিছুই খোঁজে পাননি। কিন্তু এ পার্কটি সত্যিই আকর্ষণীয়। এখানে না এলে সন্তানরা হয়তো মনে রাখার মতো কিছুই খুঁজে পেত না কুয়াকাটায়।
৯ বছরের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া তামান্নার যেন ঘোরই কাটছে না। কখনো বাঘের পিঠে, কখনো বা ব্যাঙের পিঠে উঠছে। বানরের সাথে খেলা করছে। হাতে থাকা চিপসের প্যাকেট থেকে চিপস ছুড়ে দিচ্ছে লেকের মধ্যে মাছকে খাওয়ানোর জন্য। সে জানায়, চিড়িয়াখানায় ঘুরেছি। বাঘ-সিংহ-হাতি ওইখানে দেখলেও এখানে ছুয়ে দেখতে পেরেছি। এখানে খুব মজা। পাঠ্যবইতে শকুন ও মেছোবাঘের কথা পড়েছি এখানে এসে দেখলাম। আরো অনেক বন্য পশুও দেখেছি।
শিক্ষক মোহাম্মদ শামিম হোসেন বলেন, ইলিশ পার্কে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বেশ আনন্দ পেয়েছে।
ইলিশ পার্কে দায়িত্বরত একাধিক স্টাফ জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুয়াকাটায় শিক্ষা সফরে এলে এ পার্কে ঘুরে যাচ্ছেন। তাদের ভ্রমণের বেশির ভাগ সময়ই কাটছে এখানে।
ইলিশ পার্কের উদ্যোক্তা রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অহঙ্কার কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। এখানে আদিবাসীসহ বাঙালিদের বিশাল অংশ সাগরে মাছ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু কুয়াকাটার নিজস্ব কোনো প্রতীক নেই। যেহেতু কুয়াকাটা ইলিশ মাছের জন্য বিখ্যাত তাই এই পার্কের নাম রাখা হয়েছে ইলিশ পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট। এই বিশাল ইলিশের মধ্যের তৈরি রেস্টুরেন্টটিই এখানের প্রধান আকর্ষণ। সাথে রয়েছে লাইফ ও কৃত্রিম এনিমেল। বর্তমানে ইলিশ পার্কে বিলুপ্তপ্রায় শকুন, মেছোবাঘ, বনবিড়াল, টারকি, দেশী গুজো বক, খরগোশ, সাদা ইঁদুর রয়েছে। এ ছাড়া পার্কের প্রবেশের পথে আরো বসানো হবে নানা নানা এনিমেল ভাস্কর্য। পার্কে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ পর্যটক ঘুরতে আসে এ পার্কে। তবে যারা এ পার্কে রাতযাপন করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়।

 


আরো সংবাদ



premium cement