২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ঘন কুয়াশায় কাজে আসছে না কোটি টাকার ফগ লাইট

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট
-

রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যানবাহন আর লাখো যাত্রী পদ্মা-যমুনা পাড়ি দেন। তবে শীতের মওসুমে প্রতিদিন ভোর ও রাতে ঘন কুয়াশায় নদীপথ দেখতে না পাওয়ায় নিরাপত্তার কারণে বন্ধ থাকছে ফেরি চলাচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাটে তৈরি হয় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এতে করে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। এ সমস্যা লাঘবে ২০১৫ সালে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হলেও ঘন কুয়াশার কারণে তা কাজে আসছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন-বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে প্রতি বছর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে খান জাহান আলী, শাহ আলী, কেরামত আলী, ভাষাশহীদ বরকত ও কে-টাইপ ফেরি কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরান ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হয়।
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলকভাবে এ লাইটগুলো সংযোজন করা হলেও ওই বছরের শীত মওসুমে তা সুফল বয়ে আনতে পারেনি। তিন বছর পার হলেও লাইটগুলো মেরামতে বা আধুনিকায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
শাহ আলী ফেরির মাস্টার (চালক) পরিমলচন্দ্র সরকার বলেন, ফগ লাইট শুধু রাতের বেলায় নদীপথ দেখার প্রয়োজনে সামান্য কাজ করে। কিন্তু কুয়াশা ভেদ করে সামনে কিছুই দেখা যায় না। যে কারণে ঘন কুয়াশা পড়লে যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ফেরি সাময়িক বন্ধ থাকে।
ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় এ রুটের উভয় ঘাটে শীত মওসুমে দীর্ঘ যানজট স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
ঘন কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে গত শনিবার ও রোববার সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এ সময় যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে মাঝ নদীতে আটকা পড়ে পাঁচটি ফেরি। আড়াই ঘণ্টা বন্ধ থাকার কারণে দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় আটকে পড়ে কয়েক শ’ যানবাহন। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে যানবাহনের জট।
ঢাকা থেকে ফেরি কেরামত আলীতে আসা বাসযাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অবস্থান করতে হচ্ছে আমাদের। সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেরিতে ফগ লাইট লাগিয়েছে। লাইটগুলো সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার হচ্ছে না।
আরেক যাত্রী সোহাগ মিয়া বলেন, ফেরিগুলো কুয়াশায় দিক হারিয়ে পদ্মার চরে আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই কুয়াশায় মাঝ নদীতে আতঙ্ক নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো দেখভাল নেই।
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা সবজি বোঝাই ট্রাকের চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এমনিতেই কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর ওপর ঘাটে এসে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এ ছাড়া, ঘাটে বসে থেকে বাড়ে পরিবহন খরচ।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশা প্রাকৃতিক কারণ, এতে কারো হাত নেই। আমাদের এই রুটে চলাচলকারী বর্তমানে ১৬টি ফেরি আছে। কুয়াশায় যানবাহনের সিরিয়াল কিছুটা দীর্ঘ হলেও কুয়াশা কেটে গেলে দ্রুত সময়ে যাত্রীদের পারাপার করা হয়। আর ফেরিতে ফগ লাইটের ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ, এটা প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি মেরিন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ক্যাপ্টেন শওকত সরদার বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফগ লাইটগুলো বাস্তবসম্মত ছিল না। সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়েছিল।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা এরিয়া অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক অপু বলেন, ঘন কুয়াশার মধ্যে ফগ লাইট আসলেই কোনো কাজ করছে না। ইতঃপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর উচ্চপর্যায়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুস সামাদ বলেন, বিষয়টি আমি অবহিত নই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল