২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সদর আসনে হানিফ নিশ্চিত

কুষ্টিয়ার ৪ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী

-

আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা শিগগিরই করা হবেÑ সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণায় সাবধানতা অবলম্বন করছে। কুষ্টিয়ার চারটি নির্বাচনী আসনে কারা পাচ্ছেন নৌকার টিকিট এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। এবার আওয়ামী লীগ তাদের বিজয় ধরে রাখতে প্রার্থী বাছাইয়ে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। কুষ্টিয়ার চারটি আসনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে দলীয় নেতাকর্মীরা আশা করছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থা, জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্ব গুণাবলিসহ আওয়ামী লীগের প্রাধান্য দেয়ার বিষয় অনুযায়ী কুষ্টিয়ার চারটি আসনে মনোনয়নের দৌড়ে যারা।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) : কুষ্টিয়া-১ আসনটি জেলার দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ভারত সীমান্তঘেঁষা এ আসনটি স্বাধীনতার পর বিগত বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তুলনামূলক বিএনপির প্রার্থীরাই বেশি জয়লাভ করেন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান আক্কাস জয়লাভ করেছিলেন। পরে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আহসানুল হক মোল্লা পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হন। আহসানুল হক মোল্লার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে রেজা আহমেদ বাচ্চু বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন।
১৪ দলীয় জোট থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আফাজ উদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলন। কিন্তু ওই নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। ফলে দলের বর্তমান এমপি ও সাবেকের মধ্যে নেই কোনো বনিবনা। এমনকি রাজনৈতিক মঞ্চে তাদের দু’জনের মুখ দেখাদেখিও হয় না।
বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরীর ভাইসহ সুবিধাভোগী ঘনিষ্ঠজনদের দৌরাত্ম্যে নির্বাচনী এলাকার মানুষ বেশ নাখোশ। রেজাউল করিম ও আফাজ উদ্দিন ক্ষমতা পাওয়ার পর নিজেদের পারিবারিক শক্তি হিসেবে পুরো এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। ফলে এলাকাবাসী তাদের কর্মকাণ্ডে কখনো খুশি হতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী পাশাপাশি কুষ্টিয়া বিশেষ জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমনও চেষ্টা করছেন। এ আসনে ডজনখানেক প্রার্থী মনোনয়ন তুলেছেন। এ আসনে দলীয় দ্বন্দ্ব প্রকট থাকায় এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় সংসদের প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলম। সব কিছু ঠিক থাকলে তিনিই হবেন এ আসনটির নৌকার মাঝি এমনটি মনে করছেন এলাকাবাসী। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বড় ভাই।
কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) : কুষ্টিয়া-২ আসনটি মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই দুই উপজেলার মধ্যে মিরপুর উপজেলায় ১৩টি ও একটি পৌরসভা ও ভেড়ামারা উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। দু’টি উপজেলা মিলে গঠিত এ আসনের মধ্যে মিরপুর উপজেলায় ভোটার সংখ্যা বেশি। এ নির্বাচনী এলাকার ভেড়ামারা উপজেলায় হেভিওয়েট দুই নেতার বাড়ি। এরা হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
১৪ দলীয় জোট গঠনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল (জাসদ-ইনু) জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে ইনুকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে এখানে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ােভ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু জোটগত কারণে এবারো এ আসনটি থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন হাসানুল হক ইনু। তবে মিরপুর-ভেড়ামারা দু’টি উপজেলার আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী-সমর্থকেরা এবার একাট্টা তারা ইনুর ভোট করবেন না এমনকি ভোটও দেবেন না বলে জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটিই ভেবে দেখার বিষয়। তাই এ আসনে হানিফের বড় ভাই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় সংসদের প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা রশিদুল আলমও দলীয় মনোনয়ন কিনে রেখেছেন।
কুষ্টিয়া-৩ (কুষ্টিয়া সদর) : কুষ্টিয়া-৩ (সদর) সংসদীয় আসনে ১৪ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের বর্তমান এমপি মাহবুব-উল হানিফ সব দিক থেকেই এগিয়ে আছেন। তিনি ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। গণসংযোগের পাশাপাশি তার নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়া সদরে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন ও প্রশংসিত হন। এলাকার মানুষের বহুল প্রত্যাশিত গড়াই নদীর ওপর কুষ্টিয়া হরিপুর সেতু নির্মাণ, বাইপাস সড়ক, মেডিক্যাল কলেজ বাস্তবায়ন ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছে বেশ আস্থাভাজন হয়েছেন।
হানিফের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, দলের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আমিনুল হক রতন। মাহবুব-উল আলম হানিফ কেন্দ্রীয় নেতা, সেহেতু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তার প্রার্থিতা যদি অন্য কোনো সংসদীয় আসনে রদবদল হয় এমন ধারণা থেকেই তারা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। তবে এ আসনে মাহবুব-উল আলম হানিফের বিকল্প কেউ নেই। এবারো এ আসনটি কেন্দ্রীয় এই নেতার দখলেই থাকছে বলে জানা গেছে।
কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) : কুষ্টিয়া-৪ সংসদীয় আসনটি খোকসা ও কুমারখালী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রউফ এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় গণসংযোগ করছেন। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী তৎপর আছেন। ফলে দলীয় কোন্দলসহ বর্তমান এমপি আবদুর রউফের সাথে দলের প্রভাবশালী নেতাদের সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব ও টানাপড়েন।
বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র দলের মধ্যে চরম বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নেয়। নির্বাচনে আবদুর রউফ এমপি নির্বাচিত হলেও দলের বড় অংশ তার বিপে অবস্থান নেয়। ফলে দলের অভ্যন্তরে রয়েছে চরম সঙ্কট ও দ্বন্দ্ব। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এমপি আবদুর রউফের বিপে ঘুরে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদরউদ্দিন খান, সাবেক এমপি সুলতানা তরুণ, আওয়ামী লীগের কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন জাফর ও তরুণ প্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক।
সম্ভাব্য এসব প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই কিন ইমেজের নেতা ও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তবে জনপ্রতিনিধিরা মনোনয়ন পাবেন না দলের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের পর তাদের কয়েকজন হতাশ হয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement