চিতলমারীতে স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে ফলন্ত টমেটো গাছ
- এস এস সাগর চিতলমারী (বাগেরহাট)
- ১৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্ষেতে তিন হাজার টমেটোর গাছ লাগিয়ে ছিলাম। কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যায় গাছগুলোতে প্রচুর টমেটো ধরেছিল। আশা ছিল এ বছর টমোটে বিক্রি করে সব ধারদেনা পরিশোধ করব। কিন্তু ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাটাই এখন দুরূহ ব্যাপার। হঠাৎ করে একদিনে স্ট্রোক করে মারা গেছে দেড় হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ। গত শনিবার দুপুরে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারে বিশ্বর চা’র দোকানে বসে এমনটাই জানালেন টমেটোচাষি অনুপ বিশ্বাস (৩৫)।
তিনি আরো জানান, উপজেলার কুরমনি গ্রামে তার বসবাস। মা-বাবা, ভাই, স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। পেশায় চিংড়ি ও সবজিচাষি। পরপর ক’বছর চিংড়ি চাষে লোকসানের কারণে তিন লাখ টাকার ‘কারেন্ট সুদের’ দেনা হয়ে পড়েন। আগাম টমেটো চাষে প্রচুর লাভ তাই তিনি এ বছর অনেক আশা নিয়ে টমেটোর চাষ করেছিলেন। সব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। এ রকম ভোগান্তির শিকার তিনি একা নন। এ উপজেলার কুরমনি, সুরশাইল, পাটরপাড়া, সাবোখালী, দানোখালী, পাঁচপাড়া, শ্যামপাড়া, খড়মখালী, উমাজুড়ি, খলিশাখালী, গরিবপুর, ডাকাতিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে হাজার হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ মারা যাওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
টমেটো চাষি কিশোর রায়, জোতিন পোদ্দার, শষধর রায়, সুকেশ বাড়ৈ, অসীম বসু ও তারক বিশ্বাসসহ অনেকে জানান, হঠাৎ স্ট্রোক করে তাদের ফলন্ত টমোটো গাছ মরে যাওয়ার তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় এক হাজার ৫০০ একর জমিতে চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হবে বলেও সবাইর আশা ছিল।
এ ব্যাপারে শ্রীরামপুর গ্রামের টমেটো চাষি বিমল মণ্ডল, কালশিরার বিকাশ মণ্ডল, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ, খড়মখালীর পরিতোষ মজুমদার, ক্ষিতিষ, লিটন সিংহ, কুরমুনির রেজাউল খান, দড়িউমাজুড়ি গ্রামের দেবদাস বৈরাগী, দিজেন বৈরাগী, সুবাস বৈরাগী, কুরমনির বুদ্ধ বসু ও নিহার পালসহ অনেক চাষি প্রায় অভিন্ন সুরে জানান, এভাবে যদি উৎপাদিত টমেটো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এ অঞ্চলের চাষিদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। সেই সাথে তারা হবেন ঋণগ্রস্ত। এলাকায় নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।
চিতলমারী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনন্দ বিশ্বাস টমেটো গাছ স্ট্রোকে মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, এটি মাটি বাহিত ব্যাটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ। এ রোগে গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে চারা লাগানোর আগে মাটি শোধনই একমাত্র উপায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা