২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিত্যক্ত জমিতে সবজিচাষ করে স্বাবলম্বী গৃহবধূ সানজিদা

-

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম কুজাইল দক্ষিণপাড়া। এই গ্রামের এক সফল নারী সানজিদা আক্তার তৃশা। নদীর তীরে স্বামীর পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সানজিদা। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও এখন সংসারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন। তাকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন আশপাশের অন্য নারীরাও।
উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামে ছোট যমুনার তীরে গেলে চোখে পড়বে সবুজে ঘেরা সবজিক্ষেত। ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ধনিয়া, মরিচ ও মুলাসহ নানা সবজি ও ফসলের ক্ষেত। প্রায় তিন বছর আগে সানজিদা পাশের এক কৃষকের সবজি চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন। পুরুষেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না এই ইচ্ছে শক্তি থেকে সানজিদাও শুরু করেন নদীর তীরে তার স্বামীর পরিত্যক্ত ১৫ শতাংশ জমিতে সবজিচাষ।
সফল নারী সানজিদা জানান, এক সময় সংসারের কাজকর্ম শেষ করার পর অলস বসে বসে সময় কাটাতাম। পাশের এক কৃষক নদীর তীরে তার জমিতে বছরের পুরো সময় কোনো না কোনো সবজিচাষ করতেন। সেই কৃষক নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ করতেন। তখন আমার মনে একটি জেদ কাজ করল যে পুরুষরা পারলে আমি পারব না কেন। তখন আমার স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে আমি শুরু করি সবজিচাষ। প্রথম বছর বাজারে আমার জমির মূলা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল।
সানজিদা আরো জানান, আমি নিজেই সবজির জমিতে সার, বীজ বপন করি। পানি সেচ দেয়া থেকে শুরু করে ফসলের রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ নিজেই করি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি নিজের ক্ষেতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে নিজের পরিবারকে খাওয়াতে পারছি। এখন বাজারের প্রতিটি সবজিতেই থাকে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক, যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমি নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে স্থানীয় বাজারে এই সবজি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছি। সেই অর্থ দিয়ে নিজের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগানসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করতে পারছি। স্বামীর কাছ থেকে আমাকে আর হাত পেতে টাকা-পয়সা নিতে হয় না। আজ আমার দেখাদেখি আশপাশের অনেক নারীরাও সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। আমার কাছে অন্যরা পরামর্শ নিতে এলে আমি তাদের উদ্বুদ্ধ করি। তবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি আমার এই সবজি চাষের পরিসরকে আরো বৃদ্ধি করতে চাই।
একই গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। আমার সংসারে এক সময় অভাব-অনটন লেগেই থাকত। সানজিদা আপার পরামর্শে আমিও আমার বাড়ির উঠানে অল্প অল্প করে শিম, লাউ, পালংশাকসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করছি। এখন আমার সংসারের জন্য বাজার থেকে তেমন সবজি কিনতে হয় না। নিজের সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে আমি অতিরিক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
একই গ্রামের শবনম আক্তার জানান, সানজিদা আপার দেখাদেখি আমিও আমার বাড়ি উঠানে ও পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছি। আমি আমার অলস সময়কে এই সবজি চাষের কাজে ব্যয় করছি। নিজেদের উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি যেমন নিজেদের জন্য ভালো তেমনি দেশের জন্য ভালো।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবিব রতন জানান, সানজিদা আক্তার এই অঞ্চলের একটি দৃষ্টান্ত। আমি তাকে সব সময় সহযোগিতা করে আসছি। সানজিদা আক্তারের দেখাদেখি আশপাশের আরো অনেক মহিলা স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কেউ হাঁস-মুরগি পালন করছেন, কেউ গরু-ছাগল আবার কেউ সবজি চাষ করছেন। আমি তাদেরও সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, আমি নিজে গিয়ে সানজিদা আক্তার ও অন্যান্য মহিলার সবজিক্ষেত পরিদর্শন করেছি। আসলেই তাদের উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের মহিলারাও পুরুষের পাশাপাশি ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। সানজিদাসহ যে কেউ আমাদের কাছে কৃষি সম্পর্কিত সহযোগিতা ও পরামর্শ চাইলে আমি ও আমার অফিস সব সময় তাদের পরামর্শ দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আমি আশা রাখি শুধু সানজিদা নন, এক সময় উপজেলার সব মহিলা তাদের বাড়ির উঠান ও পরিত্যক্ত জমিতে সাধ্যমতো সবজি চাষ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement