২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাওর অঞ্চলে উন্মুক্ত জলমহাল না থাকায় বেকার ৮৬ হাজার মৎস্যজীবী

সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ ধরার দৃশ্য :নয়া দিগন্ত -

সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলের ১১টি উপজেলায় ৮৬ হাজার মৎস্যজীবী পরিবার উন্মুক্ত হাওরে মাছ ধরতে না পারায় নৌকা ও জাল তুলে রেখেছেন ডাঙ্গায়। বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। এ অবস্থায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় মৎস্যজীবীদের জীবনজীবিকা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ফলে কেউ কেউ জীবন বাঁচানোর তাগিদে এলাকা ছেড়ে জেলা শহর বা বিভাগীয় শহরে রিকশা চালানোসহ অন্য কাজ শুরু করেছেন। হাওরবাসী ও বেকার জেলেদের ভিজিএফ-এর আওতায় আনা এবং উন্মুক্ত হাওরে মাছ ধরার দাবি করা হলেও সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। ফলে জেলায় জেলে পরিবারগুলোর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই শাল্লাসহ ১১টি উপজেলায় হাওরগুলোতে অতীতের মতো মিঠাপানির সুস্বাদু মাছ আর পাওয়া যাচ্ছে না। হাওর ও নদীতে মাছ না পাওয়ায় বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর ধরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী ৮৬ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে নানান অভাব অনটনে। জেলার ৮২টি হাওরে ৯৭৬টি জলমহাল রয়েছে। কিন্তু এই সব হাওর ও জলমহালে প্রতি বছরেই অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলার স্থানীয় ইজারাদার ও প্রভাবশালী মহলের নিয়ন্ত্রণ থাকে। হাওর এলাকার জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারে না। ফলে নৌকা ও জাল তুলে রেখেছে ডাঙ্গায়। এ কারণে হাওর পাড়ের মৎস্যজীবীরা এখন একেবারেই বেকার সময় পার করছেন। হাওর এলাকায় বেশির ভাগ পরিবার বছরের ছয় মাস শুষ্ক মওসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করেন আর বাকি বর্ষার ছয় মাস হাওরে মাছ ধরেই জীবন চালান।
মৎস্যজীবীরা বলেন, হাওর অঞ্চলের বাজারে এখন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ইজারাদারদের বাধার কারণে আমরা মাছ ধরতে পারি না। পরিবারপরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের মাঝে বসবাস করছি। আমাদের সরকারি কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে পারলে আমাদের জীবন চলত ভালোভাবে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করাতে পারতাম।
হাওর পাড়ের জেলে ও এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি কথাটি এখন বিলুপ্তির পথে। মিঠাপানির সুস্বাদু মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে দিন দিন। ফলে সারা বছরই হাওর অঞ্চলের বাজারগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে পাঙ্গাস মাছ আর সিদল।
হাওর অঞ্চলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, দুই-তিন বছর আগে হাওরে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যেত, আমরাও বেচাকেনা করে লাভবান হয়েছি। কিন্তু বর্তমানে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। জেলেরা হাওরে এখন মাছ ধরতে যেতে পারছে না। তারাও আতঙ্কের মাঝে আছে ইজারাদারদের কারণে। এ কারণে বাজারে এখন আছে শুধুই পাঙ্গাস মাছ আর সিদল। মাছ যাও সামান্য পাই তা নিজেরই চলে না।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, ইজরাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় জেলার হাওর ও জলমহালগুলো উন্মুক্ত নেই। ফলে কঠোর নিরাপত্তা আর মাছ ধরতে বাধা থাকায় মৎস্যজীবীরা হাওরে মাছ ধরতে পারছে না। মৎস্যজীবীদের স্বার্থে কার্যকর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া খুবই প্রয়োজন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ইলিশের সিজনের মতো এই জেলার হাওর এলাকা ভিজিএফ-এর আওতায় আনার জন্য বিভিন্ন সভা সেমিনারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ছাড়াও বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা ও কাজের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন অক্টোবর থেকে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রী ও মৎস্যমন্ত্রীর নজরে আনব। আর ঢালাওভাবে সবাইকে সুযোগসুবিধা দেয়া সম্ভব নয়। যারা প্রকৃত মৎস্যজীবী ও ভুক্তভোগী এবং মাছের ওপর নির্ভর করে বাঁচেন তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement