২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
১৪ বছরে কাজ হয়েছে ২০ ভাগ ব্যয় বেড়েছে ১৩ গুণ

শজিমেক-মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল সড়ক নির্মাণ প্রকল্প

-

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) থেকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়ার ১৪ বছর পর কাজ হয়েছে মাত্র ২০ ভাগ। সেই সাথে ব্যয় বেড়েছে ১৩ গুণেরও বেশি। তবে চলতি অর্থবছরে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলে আগামী অর্থবছরে বাকি ৮০ ভাগ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছে বগুড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঠনঠনিয়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল থেকে শহরতলির ছিলিমপুরে নবনিমিত পাঁচ শ’ শয্যা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা রোগী দ্রুত পৌঁছানোর সুবিধার্থে ২০০৪ সালে দুই হাসপাতালের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় ৬০ ফুট প্রশস্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং জমি অধিগ্রহণ বাবদ প্রায় ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। পরে জমি অধিগ্রহণে জটিলতায় রাস্তার প্রশস্ততা কমিয়ে ৪৫ ফুট নির্ধারণ করা হয়। সে মোতাবেক মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের উত্তর পাশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ পাশ ধরে নার্সিং ইনস্টিটিউট ও অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কারখানার উত্তর পাশ ধরে গোহাইল রোড হয়ে মালগ্রামের মধ্য দিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের প্রধান গেটে মিশে যাবে সড়কটি। প্রথমে শজিমেক হাসপাতালের দিক থেকে প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ধরে ৮১০ মিটার দীর্ঘ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরপর অধিগ্রহণকৃত জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। পরে প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কার্যক্রম থেমে যায়।
দীর্ঘ ১৪ বছরে প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় ৮১০ মিটার ছাড়া প্রস্তাবিত রাস্তার জমিতে স্থানীয়রা বসতি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে না করায় এক বছর পর এই ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। এভাবে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ৮০ কোটি টাকা দাঁড়ালে প্রকল্পটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রকল্পটি বাতিল না হওয়ায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য সামান্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণকৃত ৮১০ মিটার রাস্তা কার্পেটিংয়ের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২ মিটার প্রশস্ত রাস্তা করতে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সে অনুযায়ী শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিপরীতে রাস্তার কাজ শুরু হয় এবং ৮১০ মিটার রাস্তার কাজ সমাপ্ত হয়। এরপর অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ৮১০ মিটার রাস্তার কাজ হওয়ার পর আবার অনিশ্চয়তায় পড়ে প্রকল্পটি। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জনসভায় বগুড়ায় বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে এ প্রকল্পটিও ছিল। সরকারের দুই মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এই প্রকল্পে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮০ কোটির বেশি টাকা ধরা হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ। তবে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ যে অর্থ ধরা হয়েছে তা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। কারণ প্রকল্পটি যখন শেষ বারের মতো সংশোধন করে পাঠানো হয়, তখন ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ ধরা হয় মৌজা মূল্যের দেড়গুণ। কিন্তু বর্তমান আইনানুযায়ী ভূমি মালিকেরা ক্ষতিপূরণ পাবেন মৌজা মূল্যের তিন গুণ। এভাবে বিগত ১৪ বছরে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি। অর্থাৎ বর্তমানের জমির ক্ষতিপূরণসহ প্রকল্প ব্যয় ১৮৫ কোটি টাকা হতে পারে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হবে। আগামী অর্থবছরে রাস্তার কাজ শুরু হবে। ১০৫ কোটি টাকার যে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল, তা জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেড়গুণ হবে। বর্তমানে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তিন গুণ। এ জন্য আরো ৮০ কোটি টাকা বেশি লাগতে পারে। এ টাকা বরাদ্দ মিললে প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement