২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাকরি হারিয়ে কোয়েল পালন করছেন কলাপাড়ার নাঈম

-

পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের সিকদার সড়ক এলাকায় নিজ বাড়িতে নূর জাহান লাইভস্টক অ্যান্ড অ্যাগ্রো নামের একটি খামার গড়ে তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মাহবুব আলম নাঈম। সেই খামারে বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পাখি পালন করছেন তিনি। শুরু করার পর মাত্র ৯ মাস যেতে না যেতেই তিনি লাভের মুখ দেখেন। শুধু কোয়েল পাখি নয়, তার খামারে রয়েছে দেশী হাঁস, মুরগি ও কবুতর। পাশাপাশি নিজের পুকুরে পাঙ্গাস মাছ চাষ করছেন তিনি। তবে কোয়েল পাখি পালন লাভজনক হওয়ায় সে দিকেই তার নজর বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পাখি পালনের উপযোগী। কোয়েলের গোশত ও ডিম মুরগির গোশত ও ডিমের মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটি গৃহপালিত পাখি। কোয়েল পাখির আদি জন্মস্থান জাপানে। পরে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমনকি বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
মাহবুব আলম নাঈম বলেন, মাত্র ৯ মাস আগে নরসিংদীর একটি খামার থেকে ৬০০ কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনে আনি। তখন অনেকেই বলেছে বাচ্চাগুলো বাঁচবে না, মরে যাবে। তাদের কথা শুনে অনেক কষ্ট হয়েছিল তখন। যখন বাচ্চাগুলো একটু বড় হতে শুরু করল, তখন খুশিতে মনটা ভরে যায়। ধীরে ধীরে বড় হয় বাচ্চাগুলো। সেই সাথে বড় হয় আমার স্বপ্নগুলো। একপর্যায়ে বাচ্চাগুলো বড় হয়ে ডিম পাড়া শুরু করে। তখন আমার কষ্ট দূর হয়ে যায়। নাঈম বলেন, প্রথমে বাচ্চাগুলো কিনতে আমার মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমার খামারে এক হাজার ২০০ কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ ডিম দেয়। ডিমগুলো স্থানীয় বাজারে দুই টাকা পিস বিক্রি করি। সে হিসাবে আমার প্রতিদিন আয় এক হাজার ৬০০ টাকা। মাস শেষে দেখা যায়, কোয়েল পাখির ডিম বিক্রি করে আমার আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। নাঈম আরো বলেন, দিন দিন কোয়েল পাখির ডিম ও গোশতের চাহিদা বাড়ছে। কম পুঁজি নিয়ে কোয়েলের খামার করা যায়। কোয়েলের আকার ছোট বলে এদের লালন-পালনের জন্য জায়গাও কম লাগে। একটি মুরগি পালনের স্থানে মোটামুটিভাবে ১০ থেকে ১২টি কোয়েল পাখি পালন করা যায়। এ পাখির রোগব্যাধি নেই বললেই চলে। সাধারণত ছয় থেকে সাত সপ্তাহ বয়সেই একটি কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। এরা ৩৬৫ দিনে ৩২০টির মতো ডিম দেয়।
নাঈমের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে একটি এনজিওতে আওতায় চাকরি করেন। পরে বেকার হয়ে যান। কিছু দিন পর বাজার থেকে শখের বসে দু’টি কোয়েল পাখি কিনে লালন-পালন শুরু করেন। একপর্যায়ে তার মাথায় আসে অধিকহারে এই পাখি পালন করলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। সেই থেকেই তার পথচলা শুরু। এখন তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকানুল ইসলাম বলেন, নাঈমের কোয়েল চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এই পাখির ডিম ও গোশত পুষ্টিকর হওয়ায় এলাকার অনেকে খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যান। এ ছাড়া দামও খুব কম। আমার মতে, কোয়েলের খামার করে বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
কলাপাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক কামরুজ্জামান বলেন, কোয়েলের ডিম ও গোশতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। কোয়েলের ডিম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
কলাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, মাঝে মধ্যে নাঈম তার খামারের বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। অল্প পুঁজি ও স্বল্প পরিসরে কোয়েল পালন করা যায়। এর গোশত ও ডিম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এ কারণে দিন দিন কোয়েল পালনে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement