২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৪৮ বছরেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়নি রংপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পাড়ায়

রংপুর মহানগরীর ধর্মদাস কুটিরপাড়া এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের কমিউনিটি সেন্টারে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে অ্যাসেম্বলির দৃশ্য : নয়া দিগন্ত -

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হতে চললেও এখনো একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়নি রংপুর মহানগরীর ধর্মদান কুটিরপাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মহল্লায়। এখানে একটি কমিউনিটি সেন্টারের দু’টি রুম নিয়ে একটি বেসরকারি উদ্যোগে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। এ কারণে পিছিয়েপড়া এই জনগোষ্ঠী দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
সরেজমনি অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, রংপুর মহানগরীর তাজহাট মেট্রোপলিটন থানার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ধর্মদাস কুটিরপাড়া, দোলাপাড়া এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোকরাম ও উত্তর শেখপাড়া মহল্লা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত গ্রাম। এখানে প্রায় ৪৫০ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসবাস করে। গত ৪৮ বছরে এই জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোর জন্য এখানে কোনো প্রাথমিক শিক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে এখানকার বাসিন্দারা নিজস্ব ভাষার বাইরে বাংলা ভাষা এবং কৃষ্টিকালচারের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারছে না।
ধর্মদাস কুটিরপাড়া মহল্লার রনজিত মুণ্ডা পাহান জানান, আমাদের চার গ্রামের কয়েক কিলোমিটার দূরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। কিন্তু সেখানে আমাদের শিশুরা গেলেও ঠিকমত পাঠ গ্রহণ করতে পারে না। আমাদের শিশুরা ওই স্কুলে গিয়ে অন্যদের সাথে মিশতে ও তাল মেলাতে পারে না। এসব বিষয় উল্লেখ করে আমাদের জনবসতি অধ্যুষিত গ্রাম চারটির মাঝখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্বাধীনতা উত্তর সব ক’টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে বহুবার লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
রনজিত মুণ্ডা পাহান আরো জানান, সরকারিভাবে প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ না থাকার কারণে আমাদের প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত থেকেই বেড়ে উঠছে। তারা বাংলাদেশের কৃষ্টিকালচার ভাষার সাথে পরিচিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারছে না। ফলে নিজেদের ভাষা এবং শ্রমঘন পেশায় তারা নিয়োজিত থাকছে। এখানে শিক্ষার ব্যবস্থা করলে আমাদের সন্তানরাও বাংলাদেশের মূল উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থা বদলে দিতে পারত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৭ সালের গোড়ার দিকে ধর্মদাস কুটিরপাড়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কল্যাণ সংস্থার নামে মৃত সুরুল্লা মুণ্ডা ও চামু মুণ্ডা ২৪ শতক জমি দান করেছিলেন। সেখানে কুঁড়েঘর নির্মাণ করে ওই চারগ্রামের বাসিন্দারা সন্ধ্যায় মিলিত হতো। সেখানে সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ওই এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। কিন্তু সেটি অপর্যাপ্ত ও অগোছালো হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম আর এগোয়নি।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৫ সালে রংপুর জেলা প্রশাসন ওই কুঁড়েঘরটির জমিতে সরকারি খরচে প্রতিষ্ঠা করেন তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কমিউনিটি সেন্টার। এরপর সিসিলিয়া মিশনারী নামে একটি প্রতিষ্ঠান সেখানকার দু’টি রুমে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ২০০৬ সাল থেকে সেখানে এই সামান্য প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম চালু আছে। দু’জন শিক্ষক ওই স্কুল পরিচালনা করছেন। ফলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্তই প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আবারো শ্রমঘন কাজে ফিরে যাচ্ছে শিশুরা।
ওই স্কুলের শিক্ষক ভূপেন্দ্র নাথ পাহান জানান, সিসিলিয়া মিশনারী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করে দিলেও স্থানীয়রা অনেক কষ্ট করে স্কুলটি পরিচালনা করছেন। গত বছর এখানে সরকারিভাবে মাত্র ১২ সেট প্রাথমিক বই বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। স্কুলটিকে বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে চারগ্রামের এই শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত থাকছে। তিনি জানান, স্কুলে আমাকে এক হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। তাই স্কুলে কাজের পরে অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। তারপরেও এখানকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার জন্য দিনাজপুরের বিরামপুর থেকে এখানে এসে বসবাস করছি। অপর শিক্ষক উজ্জলা মুরমু নয়া দিগন্তকে জানান, এই চারগ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উপযোগী। কিন্তু দু’টি ছোট ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে মাত্র ২৪ জন শিশুর পাঠদানের সুযোগ আছে।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর সামসুল হক জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য এখানে একটি পৃথক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমি করপোরেশনের বৈঠকে উপস্থাপন করব।
রংপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলামকে জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবেষ্টিত ওই গ্রামগুলোতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে আমি একমত।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রংপুর সদর উপজেলা সভাপতি সাঈদ হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, ওই পাড়াগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি। তা না হলে সেখানকার শিশুরা দেশের মূলধারার সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে না। এ বিষয়ে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement
শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া

সকল