২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
  বঙ্গোপসাগরে ৯ ট্রলারডুবি  

১ জনের লাশ উদ্ধার নিখোঁজ ৮৪

-

পিরোজপুরে বঙ্গোপসাগরে দু’টি ফিশিং ট্রলার ডুবে একজন নিহত হয়েছেন ও নিখোঁজ রয়েছেন একজন। অন্য দিকে পটুয়াখালীতে ঝড়ের কবলে পড়ে মৌডুবীসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সাতটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৮৩ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
পিরোজপুর সংবাদদাতা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল সাগরে দু’টি ফিশিং ট্রলারডুবিতে ইছাহাক ফরাজি (৪৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন। পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস্যবন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা আকন ও ট্রলারমালিক সমিতির সেক্রেটারি ইকবাল এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
জেলে সমিতির নেতা শেখ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, উত্তাল সাগরের গভীর পানিতে মাছ ধরার সময় শুক্রবার সকালে পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরের আওতাধীন মধু মাঝির এফবি আকবর নামের ট্রলারটি ১৮ জন লোক নিয়ে ডুবে গেলে অন্য ট্রলারের সাহায্যে ট্রলারমালিক মধু মাঝিসহ ১৭ জন তীরে আসতে সক্ষম হন। তবে ট্রলারের মিস্ত্রি নিখোঁজ রয়েছেন। তার বাড়ি ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া গ্রামে। অন্য দিকে ১৬ জন জেলে ও মাঝিসহ এফবি ইসরাত জাহান নামের ট্রলারটি ডুবে ইন্দুরকানীর কালাইয়া গ্রামের ইছাহাক ফরাজির মৃত্যু হয়। এ ট্রলারের অন্য ১৫ জন ভারতের জলসীমায় ভেসে গেলে সে দেশের লোকেরা তাদের উদ্ধার করে এবং তারা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে পাড়েরহাট ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীতে ঝড়ের কবলে পড়ে মৌডুবীসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে আটটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ঘটনায় ৮৩ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
স্থানীয় জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, মৌডুবীসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের হাইরের মোহনায় আকস্মিক ঝড়ের তোড়ে নামবিহীন মজিবর ও বাবুল ফকিরের দু’টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। গত বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে মাছ ধরা শেষে ঘাটে ফেরার পথে ১২ জন জেলেকে নিয়ে ট্রলার দু’টি ডুবে যায়। কয়েক ঘণ্টা সাগরে ভাসমান থাকা অবস্থায় অপর একটি মাছ ধরা ট্রলার জেলেদেরকে উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেনÑ ট্রলার মাঝি বাবুল ফকির, শাকিল এমরান, দোয়েল, মিরন, শফিক। অপর ট্রলারের জেলেরা হলেনÑ মজিবর, শাহ আলম, রফিক, নজু, সোলায়মান, দেলোয়ার। ডুবে যাওয়া ট্রলার দু’টি উদ্ধার করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে ৩৮ জেলে নিয়ে আরো তিনটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার সকালে কুয়াকাটা থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার গভীরে এ ঘটনা ঘটে। তবে চারটি ট্রলারের জেলেরা অন্য ট্রলারের জেলেদের সাহায্যে তীরে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রলারগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ ৬০ লক্ষাধিক টাকা বলে জানা গেছে।
ফিরে আসা জেলে বাবুল ফকির, মজিবর, নান্টু, জাকির ও সোহেল জানান, দীর্ঘ দিন পর আবহাওয়া অনুকূলে আসায় হাজার হাজার জেলে গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারে যায়। মাছ নিয়ে ফিরে আসার সময় হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে নামবিহীন তিনটি ও এফবি হাওলাদার নামের একটি ট্রলার নিমজ্জিত হয়। এ সময় জেলেরা বয়া ধরে অন্তত এক ঘণ্টা ভাসমান থাকার পর অন্য ট্রলারের জেলেরা তাদের উদ্ধার করে।
নিমজ্জিত হাসান মৃধার ট্রলারে ১১ জন, ফেরদৌস গাজীর ট্রলারে ১০ জন, কালু মিয়ার ট্রলারে সাতজন, অহিদুল হওলাদারের এফবি হাওলাদার নামের ট্রলারটি ১০ জন জেলেসহ চার লাখ টাকার ইলিশ নিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে জেলেরা উল্লেখ করেন।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি দিদার উদ্দিন মাসুম ট্রলারডুবির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, যে সময়টায় সাগরে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে, সে সময়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় মালিকদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
এ দিকে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ৩৩ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। গত পাঁচ-ছয় দিন আগে মহিপুর-আলীপুর মৎস্য আড়ত থেকে বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে মাছ ধরতে যায় তারা। সাগর উত্তাল হওয়ার কারণে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে বেশির ভাগ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসে। তবে এফবি দেলোয়ার মোল্লা, এফবি হাবিব খলিফা, এফবি বিসমিল্লাহ ও এফবি নূরবানুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এর ঘণ্টাখানেক আগে এফবি বিসমিল্লøাহ ও এফবি নূরবানুসহ ৩৭ জেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সুন্দরবনের ভেদাখালীতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বর্তমানে তারা মংলা হয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, এফবি দেলোয়ার মোল্লা ও এফবি হাবিব খলিফা নামের ট্রলার দু’টির সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। ওই ট্রলার দু’টিসহ ৩৩ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। গত শুক্রবার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement