রাজবাড়ী শহররা বাঁধ ফের পদ্মার ভাঙন ঝুঁকিতে
- এম মনিরুজ্জামান রাজবাড়ী
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০, আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২১:১৪
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে আবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ। ইতোমধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলছে এই ভাঙন। দুই সপ্তাহ ধরে ভাঙছে পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ। আর সদর উপজেলার গোদারবাজারে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে গত সোমবার রাত থেকে।
পদ্মার তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণিতে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শহররা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার এলাকা। বিলীন হয়ে গেছে ৩০টি বসতবাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, দু’টি স্কুল, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের তথ্য মতে, ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার গোদারবাজার থেকে বোতলা সøুইস গেট পর্যন্ত পদ্মার তীর সংরণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। রাজবাড়ী শহররা বাঁধ (ফেজ-১) প্রকল্পের আওতায় দুই দশমিক ২৪ কিলোমিটার এলাকায় সম্পন্ন করা হয় পদ্মার তীর সংরণের কাজ। গত দুই সপ্তাহে এ আড়াই কিলোমিটারে পাঁচবার ভাঙন দেখা দেয়। এ অবস্থায় শহররা বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এটি রায় জরুরি ভিত্তিতে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। দুই সপ্তাহে ওই পাঁচ এলাকায় ১০ হাজার বালির বস্তা ফেলা হয়েছে বলে জানায় পাউবো কর্তৃপ।
রাজবাড়ীর ধুঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক দোলনা সুলতানা জানান, ভাঙনের কারণে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত পাশের গোদারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র রাখা হয়েছে।
পদ্মায় বিলীন হতে বসেছে বাবা-মায়ের কবর। শেষবারের মতো জিয়ারত করছেন ইউনুস আলী শেখ। ভাঙনের খবর শুনে ছুটে এসেছেন ব্যবসায়ী ইউনুস আলী শেখ। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন গোয়ালন্দে। জিয়ারত শেষে বলেন, বড় ভাই, চাচারা সবাই এখানে থাকতেন। নদীতে ভাঙনের খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। মনে হয়ে আজকের মধ্যে সব নদীতে যাবে। বাবা-মায়ের কবর হয়তো আর জিয়ারত করতে পারব না। তাই শেষবারের মতো কবর জিয়ারত করতে এলাম।
একই এলাকার বাসিন্দা জয়নাল মণ্ডল বলেন, রোববার রাত ১টায় বিকট শব্দে ভাঙন শুরু হয়। ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরের পেছনের বাঁশঝাড়টি আর নেই। নদীর অবস্থান মূল ঘর থেকে মাত্র ১০ হাত দূরে। এ অবস্থায় ঘর ভেঙে জিনিসপত্র নিয়ে শহররা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি।
ভাঙন পরিস্থিতি নিয়ে পাউবো রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, রাজবাড়ীর নদীপথের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২৩ কিলোমিটার পাউবোর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন চলছে। গত দুই সপ্তাহে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলায় অন্তত পাঁচ হাজার বিঘা ফসলি জমি ও অসংখ্য বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে শহররা বাঁধের গোদারবাজার অংশ। এ নিয়ে আমরা নিজেরাও চিন্তিত। আপাতত বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৪০০ পরিবারের বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে আছে আরো প্রায় ১৫০০ পরিবার।
মঙ্গলবার দৌলতদিয়ার ঢল্লাপাড়া গ্রামে দেখা যায়, পদ্মার পাড়ে ঢল্লাপাড়া জামে মসজিদের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা দু-এক দিনের মধ্যে পুরো মসজিদটি নদীতে চলে যাবে।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঢল্লাপাড়া রাস্তার ইট তুলে নেয়া দেখছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জলিল সরদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নদীতে চলে গেছে। শতাধিক পরিবারের বসতভিটা, একটি মাজার বিলীন হয়েছে। ঢল্লাপাড়া জামে মসজিদ বিলীন হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে পদ্মার পেটে চলে যাবে। নদী থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে তাঁর বাড়ি। যাওয়ার মতো জায়গা না থাকায় কোথায় যাবেন সেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ভাঙনের মুখে বসতভিটা থেকে ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন পরিবারের লোকজন।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, এক মাস ধরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হওয়ায় ২ নম্বর ওয়ার্ড ঢল্লাপাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আফছের শেখেরপাড়া ও লালু মণ্ডলপাড়ার প্রায় ৩০০ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ১০০ পরিবার ভাঙন থেকে রা পেতে অন্যত্র গেছে। প্রতিদিন অনেক পরিবার সরে যাচ্ছে। এ ছাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্তার মেম্বারপাড়া, সিদ্দিক কাজীপাড়া ও মজিদ শেখেরপাড়ার প্রায় ১৫০০ পরিবার ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসার উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় বন্যা ও নদীভাঙনে তিগ্রস্ত ১৭০০ পরিবারের তালিকা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে তিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে জিআরের চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা