২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
উৎপাদন নেমে এসেছে ৭ টনে

পাট সঙ্কটে পলাশের বাংলাদেশ জুট মিল বন্ধের পথে

পাট সঙ্কটে বাংলাদেশ জুট মিলের বেশির ভাগ তাঁত মেশিন বন্ধ রয়েছে :নয়া দিগন্ত -

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল শিল্প এলাকার বাংলাদেশ জুট মিলটি পাট সঙ্কটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে। পাট সঙ্কটে মিলের উৎপাদন ৪৫ টন থেকে নেমে সাত টনে চলে এসেছে। বন্ধ রয়েছে মিলের বেশির ভাগ তাঁত মেশিন। এতে মিলের প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তার মাঝে মিল বন্ধের আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেই সাথে মিলের উৎপাদিত প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের অবিক্রীত পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে মিলের গুদাম ঘরে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় উৎপাদিত ফিনিশিং বিভাগে যত্রতত্র পড়ে পণ্য নষ্ট হচ্ছে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় অর্থ সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষকে।
বাংলাদেশ জুট মিলের পণ্য বিক্রি করে থাকে বিজেএমসি। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি বাবদ বিজেএমসির কাছে ৯৩ কোটি টাকা পায় বাংলাদেশ জুট মিল। কিন্তু বিজেএমসি সময়মতো টাকা না দেয়ার কারণে পাট কিনতে ও শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি দিতে পারছেন না মিল কর্তৃপ। বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে মিলের সাড়ে চার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের। মিলের তাঁত শ্রমিকেরা ােভ প্রকাশ করে বলেন, আগে আমরা সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মজুরি পেতাম। কিন্তু পাট সঙ্কটের জন্য আমরা সপ্তাহে এখন মাত্র এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু অর্থ সঙ্কটের কারণে একাধিক সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় আমাদের আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। অনেকে মজুরি না পেয়ে মিলে আসছেন না।
মিলের সিবিএ সভাপতি ইউসুফ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান জানান, ৫২০ তাঁতের এই জুট মিলটিতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এক সময় বাংলাদেশ জুট মিলটি দেশের অন্যতম লাভজনক জুট মিল ছিল। কিন্তু বিজেএমসি কর্তৃপরে অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতায় মিলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজেএমসি টাকা না দেয়ায় মিল কর্তৃপ পাট কিনতে পারছে না ফলে মিলের উৎপাদন ৪৫ টন থেকে সাত টনে নেমে এসেছে। অপর দিকে মিলের বিদ্যুৎ বিল প্রায় এক কোটি টাকা ও গ্যাস বিল সাত লাখ টাকা বকেয়া জমে গেছে। বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে বিদ্যুৎ কর্তৃপ বারবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নোটিশ দিচ্ছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ছয় বছর ধরে মিলের চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির টাকাও দিতে পারছে না মিল কর্তৃপ। এ পর্যন্ত মিলে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটির প্রায় ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জুট মিলের কাছে পাট ব্যবসায়ীরা ২৮ কোটি টাকা পাওনা থাকায় এখন পাটও সরবরাহ করছে না ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে এক ট্রাক করে পাট এনে কোনো রকমে উৎপাদন চালু রেখেছে বলে জানান মিল কর্তৃপক্ষ।
এ দকে মিলটির উৎপাদন বিভাগ থেকে জানা যায়, মিলের উৎপাদিত প্রায় ৩৫ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সঙ্কছে মিল কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে বকেয়া মজুরি বাড়ছে। নিয়মিত মজুরি প্রদান করতে না পারায় দেখা দিচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ জুট মলের মহাব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বিজেএমসির অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement