১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দৌলতদিয়ায় যতই আসছে গরুর গাড়ি ততই বাড়ছে চাঁদাবাজি

-

পবিত্র ঈদুল আজহা যতই ঘনিয়ে আসছে, দৌলতদিয়ায় গরুর গাড়ির চাপ ততই বাড়ছে। আর এ সুযোগে দৌলতদিয়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাঁদাবাজি। সেই সাথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে কোরবানির পশুবাহী যানবাহন নদী পার হওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে এসে নানা দুর্ভোগে পড়ছে। সঙ্ঘবদ্ধ দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠায় তাদের মাধ্যম ছাড়া ফেরির টিকিট মিলছে না। এ ক্ষেত্রে গাড়িপ্রতি ২৫০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হচ্ছে বলে চালকেরা অভিযোগ করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তীব্র নাব্যতা সঙ্কটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুট দিয়ে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ওপর। কিন্তু এখানে তীব্র ¯্রােত ও বেশির ভাগ ফেরি যান্ত্রিকভাবে দুর্বল থাকায় চাপ সামাল দেয়া কর্তৃপক্ষের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কোরবানির পশুবাহী যানবাহনসহ অন্যান্য বাড়তি যানবাহনও চলাচল শুরু হয়ে গেছে। বাড়তি এ চাপ সামাল দিতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌরুটে অলস বসে থাকা ফেরি শাহ মখদুম, এনায়েতপুরী ও ক্যামেলিয়া নামের তিনটি ফেরি গত সোমবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে নিয়ে আসা হয়। শাহ পরাণ নামের আরেকটি ফেরিও বহরে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। গত বুধবার ছোট-বড় মিলিয়ে এ রুটে ফেরি চলছিল ২১টি। কিন্তু বেশির ভাগ ফেরি জরাজীর্ণ হওয়ায় কখন কোনটি বিকল হয়ে পড়ে তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত কয়েকদিনের মতো বুধবারও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় নদী পারের জন্য এসে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। বিকেল ৪টা নাগাদ যানবাহনের সারি ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে আটকে ছিল। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার জুড়ে ছিল যানবাহনের দু’টি সারি। আটকে থাকা পাঁচ শতাধিক যানবাহনের মধ্যে দুই-তিন দিনেও ফেরির নাগাল পায়নি দুই শতাধিক অপচনশীল পণ্য বোঝাই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এ ছাড়া যাত্রীবাহী বাস, পশু বোঝাই ট্রাক, কাঁচামালবাহী ট্রাকসহ জরুরি প্রতিটি যানবাহন অন্তত দুই-এক ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকার পর ফেরির নাগাল পাচ্ছে। আটকে থাকা যানবাহনের যাত্রী, চালক ও কোরবানির পশু প্রচণ্ড রোদ ও গরমে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
অপরদিকে ঘাটে যানবাহন আটকে পড়ার সুযোগ নিচ্ছে সঙ্ঘবদ্ধ দালাল চক্র। গরুবাহী ট্রাক, কাঁচামাল ও অপচনশীল পণ্য বোঝাই ট্রাক চালকরা অভিযোগ করেছেন, তারা দালাল ছাড়া সরাসরি কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কাটতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে টিকিটের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২৫০-১০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দালালের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। বিনিময়ে তারা গাড়িতে বসেই টিকিট হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। চালক ছাড়া কারো হাতে টিকিট না দেয়ার বিধান রয়েছে। দালাল নিয়ন্ত্রণের জন্য কাউন্টার এলাকায় সার্বক্ষণিক ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকলেও দালাল নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না বলে চালকরা অভিযোগ করেছেন। কাউন্টারসহ ঘাটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের স্থাপিত সিসি ক্যামেরাগুলোও দীর্ঘ দিন ধরে বিকল হয়ে আছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ১৬টি গরু বোঝাই করে মঙ্গলবার বেলা ১টায় দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছান ট্রাক চালক রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, ঘাটে এসে সিরিয়ালে দাঁড়ানোর কিছু পরেই দু’জন দালাল এসে দুই হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে ফেরির টিকিট দিয়ে গেছে। টিকিটের নির্ধারিত মূল্য এক হাজার ৪৬০ টাকা। বাড়তি ঝামেলা এড়ানোর জন্য তিনি এভাবে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা হয়ে গেলেও ফেরিঘাটে পৌঁছাতে পারছেন না।
কুষ্টিয়া থেকে ২০টি গরু নিয়ে আসা ট্রাক চালক সফিকুল ইসলাম ও বেপারি আবদুর রহিম জানান, তাদের ট্রাকের আটটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে ট্রাকটি দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুল এলাকায় রেখে গরুগুলো নামিয়ে ফেলেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা বিশ্রাম শেষে ওই দিন বেলা ২টায় আবার যানবাহনের সিরিয়ালে প্রবেশ করেন। সিরিয়ালে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে থাকার পর ফেরির নাগাল পান। কিন্তু ফেরির টিকিট পেতে এক হাজার ৪৬০ টাকার পরিবর্তে দুই হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। কাউন্টারে গিয়ে টিকিট নেয়া কঠিন ব্যাপার বলে দালালদের মাধ্যমেই তারা এভাবেই টিকিট নেন।
বেনাপোল থেকে পেঁয়াজ বোঝাই করে আসা ট্রাক চালক সাগর মিয়া, মাগুরা থেকে কলা বোঝাই করে আসা ট্রাক চালক মোহাম্মদ মিজান, বেনাপোল থেকে গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই করে আসা চালক আশরাফ মিয়া, ঝিনাইদহ থেকে সবজি বোঝাই করে আসা ট্রাক চালক এরশাদ আলী দালালদের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে ফেরির টিকিট নেয়ার কথা জানান। দালাল ছাড়া কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া যায় না বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে দৌলতদিয়ায় কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন বলেন, তারা অগ্রাধিকার দিয়ে গরুর গাড়িগুলোকে দ্রুত ফেরিতে ওঠার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাদের কোনো সদস্য কোনো ধরনের অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত নেই বলে তিনি দাবি করেন। তবে বাড়তি টাকা আদায়ের কোনো অভিযোগ কেউ তাদের কাছে করেনি। করলে ব্যবস্থা নেয়া যেত।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক সফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়তি টাকা আদায় সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ তার জানা নেই। তাছাড়া ট্রাক বুকিং কাউন্টার থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। বাইরে দালালদের কেউ ওই চালক বা বেপারিকে প্রতারিত করে থাকতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল