২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরবরাহ হচ্ছে আয়রনযুক্ত নোংরা ও দূষিত পানি

মাদারীপুরে ৩ কোটি টাকার পাম্পে মিলছে না বিশুদ্ধ পানি
মাদারীপুরে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দু’টি পানির পাম্পের একটি; পাম্প দিয়ে সরবরাহ হচ্ছে আয়রন ও ময়লাযুক্ত পানি (ইনসেটে) : নয়া দিগন্ত -

তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দু’টি পানির পাম্প থেকে সুপেয় নিরাপদ পানির বদলে সরবরাহ করা হচ্ছে আয়রনযুক্ত নোংরা ও দূষিত পানি। নিরাপদ পানির জন্য ব্যয়বহুল এ ব্যবস্থা এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পানি ব্যবহারে জন্ডিস, কলেরাসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা। প্রতি মাসে নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্রাহকেরা পাচ্ছেন না বিশুদ্ধ পানি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সুপেয় ও নিরাপদ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২০১২ সালের আগস্ট মাসে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। এ অর্থের ৭০ ভাগ সরবরাহ করে সরকার এবং ৩০ ভাগ সরবরাহ করে এসএস কনস্ট্রাকশন ও এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি এনজিও। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ও শিবচর উপজেলার নিলখী ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় দু’টি পানির পাম্প। চুক্তি অনুসারে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৩০ ভাগ অর্থ যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান এর লভ্যাংশ গ্রহণ করে পাম্প দু’টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসা-বাড়িতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় দুই হাজার ৯০০ টাকা করে। দু’টি পাম্পের এক হাজার ১২০ জন গ্রাহককে মাসে ১৮০ টাকা করে পানির বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৫-৬ ঘণ্টা পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ, পাম্প চালুর পর থেকে গ্রাহকদের ৫-৬ ঘণ্টা পানির সুবিধা দেয়ার কথা থাকলেও প্রতিদিন দেয়া হচ্ছে ২-৩ ঘণ্টা। তাও মাত্রাতিরিক্ত আয়রনযুক্ত নোংরা ও দূষিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও প্রতি মাসে ১৮০ টাকা নির্ধারিত পানির বিলের বিপরীতে নেয়া হয় ২০০ টাকা করে।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কবিরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের পিছনে নির্মাণ করা হয়েছে পানির বড় একটি ট্যাংক। পাশেই রয়েছে পানির পাম্প। পাম্পের পাইপগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে। আশপাশে ময়লার স্তূপ। একই চিত্র শিবচর উপজেলার নিখলী ইউনিয়নে।
কবিরাজপুর ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণদী গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম বলেন, ‘এই পানি খাওয়ার অযোগ্য, তবুও প্রতি মাসে ২০০ টাকা করে বিল দিতে হয়। সরকারি এই পানি এখন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই পনিতে প্রচুর ময়লা আর আয়রন আসে। এই পানি কোনো পাত্রে রাখলে পাত্র একদিনেই লাল হয়ে যায়।’
মহিউদ্দিন নামে এক গ্রাহক বলেন, পাম্প দিয়ে সব সময় ময়লা পানি আসে। কিছুদিন আগে এই পানি পান করে আমার ঘরের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পর থেকে এই পানি রান্নাবান্নাসহ ঘরের কোনো কাজে আর ব্যবহার করি না। হাত-পা ধোয়া ছাড়া এই পানি আমাদের কোনো কাজে আসে না।
শিবচরের নিখলীর এক গ্রাহক মোবারক আলী বলেন, নিরাপদ পানি পাব বলে বাসার ছাদে পানির ট্যাংকি বাসাই। কিন্তু এই ট্যাংকিতে পানির সাথে ময়লা ভাসছে। পানির বর্ণ পরিবর্তন হয়ে লালচে হয়ে গেছে।
রাজৈর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আলী মাতুব্বর বলেন, ৫০ ফুট উঁচু ও ১০০ ঘন মিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প দুইটি থেকে নোংরা পানি সরবরাহের কথা নয়। আমি ছয় মাস আগে পাম্প থেকে পানি সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে দেখেছি, তখন খারাপ কিছু পাইনি। তবে এখন কী অবস্থা তা জানি না। আর পাম্পে নিয়োজিত স্টাফ আমাদের কিছু জানায়নি। গ্রাহকেরাও কোনো অভিযোগ দেননি। পাম্প দু’টি যেহেতু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে, সেহেতু আমরা বিষয়টি দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেবো।
মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, কোনো পানির পাম্প থেকে যদি নোংরা, আয়রনযুক্ত পানি সরবরাহ করা হয়, তবে তা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এই পানি পান করলে জন্ডিস, কলেরা, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত যেকোনো রোগ হতে পারে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ প্রকল্পে জনসাধারণ উপকৃত হয়নি। জনসাধারণকে সঠিকভাবে পানি সরবরাহ করা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি এ বিষয়ে আমরা অনিয়ম ও দুর্নীতি পাই তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement