১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হোমনায় মসজিদের জমি দখল করতে প্রতারক চক্র সক্রিয়

-

কুমিল্লার হোমনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া খারিজ খতিয়ান ব্যবহার করে মসজিদের জমি বিক্রি করতে একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার রামকৃষ্ণপুর মৌজার সাবেক ১১১৩ নং দাগের ‘খ’ তফসিলভুক্ত ২৫ শতাংশ জমি ১৯৭৯ সালে মতিউর রহমানের নামে জমা খারিজ হয়। পৈতৃক সূত্রে মালিক হয়ে ওই জমি মতিউর রহমানের ছেলে সিব্বির আহম্মদ ও মোবাশ্বের আলী মোহাম্মদ আব্দুল্লার কাছে বিক্রি করেন। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এ জমিটি ২০১২ সালে মসজিদকে দান করেন। এ জমির ওপর একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় যা বাইতুল নূর জামে মসজিদ নামে পরিচিত। ওই মসজিদে শুক্রবারে জুমাসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আসছেন মুসল্লিরা। কিন্তু জমিটি ‘খ’ তফসিলভুক্ত হওয়ায় অবমুক্তি না হওয়ায় মসজিদের নামে ওয়াকফ দলিল রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি।
এ দিকে একই গ্রামের ক্ষেত্রমোহন ঘোষের ছেলে দুলাল চন্দ্র ঘোষ ১৯৭০ সালের একটি ভুয়া দলিল দেখিয়ে স্থানীয় ভূমি অফিসের যোগসাজশে জালিয়াতি করে তার নামে ভুয়া নাম খারিজ খতিয়ান সৃজন করে। পরে রোকা, আউয়াল, হাকিম ছিদ্দিক গংদের সহযোগিতায় মসজিদ কমিটির কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা না পেয়ে গত ১১/৫/২০১৫ তারিখে এ খারিজ খতিয়ান ব্যবহার করে জমিটি মোহাম্মদ রুকনের নামে রেজিস্ট্রি করতে হোমনা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আসে। খবর পেয়ে মসজিদের সেক্রেটারি এবং জমিদাতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ খারিজ খতিয়ানের বিষয়ে আপত্তি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃজনকৃত নাম খারিজ খতিয়ানে ইউএনওর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে নিশ্চিত হয়ে ইউএনও জমি বিক্রি বন্ধ রাখতে এবং জমি বিক্রেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এ খবর পেয়ে প্রতারক চক্র জমি রেজিস্ট্রি না করে পালিয়ে যায়। পরে অধিকতর তদন্ত শেষে স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী নায়েব মোস্তাফিজুর রহমানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান বরখাস্ত হলেও তার সৃজন করা প্রায় শতাধিক ভুয়া নাম খারিজা খতিয়ান বাতিল করা হয়নি। বর্তমানে এ ভুয়া নাম খারিজ খতিয়ান দেখিয়ে এ চক্রটি গ্রামের লতু ভূঁইয়ার ছেলে খোকন ভূঁইয়ার ৮ শতাংশ জমি দখল করছে এবং ফের নূর মসজিদের ২৫ শতাংশ জমি দখল করতে পাঁয়তারা করছে।
এ ব্যাপারে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ও জমিদাতা আব্দুল্লাহ বলেন, আমি ২০১২ সালে মতিউর রহমানের ছেলেদের কাছ থেকে জায়গা খরিদ করে মসজিদের নামে দান করি। কিন্তু দুলাল চন্দ্র ঘোষ, রুকন, আউয়াল, হাকিম এরা একটি চক্র ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মসজিদের জমিটি দখলে নিতে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
এ বিষয়ে দুলাল চন্দ্র ঘোষের নন্বরে ফোন করে বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে গৌতম চন্দ্র ঘোষ (৩৭) বলেন, আমার জন্মের পূর্ব থেকে এ জমি মতিউর রহমানের দখলে ছিল। তার ছেলেরা জমি বিক্রি করেছে এখানে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোক আমার বাবাকে ফুঁসলিয়ে নকল কাগজপত্র তৈরি করে চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করছে।
এ দিকে রোকন ওরফে রোকা বলেন, দুলাল চন্দ্র ঘোষ এ জমির প্রকৃত মালিক সেজে নাম খারিজ করে আমার কাছে বিক্রি করতে গেলে খারিজ খতিয়ান ঠিক না থাকায় জমি রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। আমি মসজিদ কমিটির কাছে কোন চাঁদা দাবি করিনি।
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সালেহ আহামদ বলেন, দুলাল চন্দ্র ঘোষের নামে কোনো খারিজ খতিয়ানের রেকর্ড অফিসে নেই। তা শতভাগ ভুয়া। এ ভুয়া খতিয়ান সৃজনের কারণে সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের চাকরি চলে গেছে। এখন যদি এ খতিয়ান নিয়ে কেহ প্রতারণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement