১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে খানাখন্দ : মাঝপথ খালে পরিণত

খানাখন্দে ভরা শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে যানবাহন চলাচল একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে : নয়া দিগন্ত -

শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ৪০ কিলোমিটারের ৩৫ কিলোমিটারের অবস্থাই করুন। বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে সড়কটি মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যানবাহনতো দূরের কথা জনসাধারণের চলাচলেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি।
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথের ব্যবসায়ী, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ যাত্রীদের। চট্টগ্রাম থেকে খুলনা, মংলা, বরিশালসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যান চলাচল কমে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি সার্ভিস। ফলে প্রতিদিন প্রায় সাত লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
স্থানীয় ও পরিবহনের লোকজন জরুরি ভিত্তিতে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে সড়কটির মেরামতকাজ শেষ হবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে মংলা, সিলেট থেকে বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে বরিশাল, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়ক পথে সহজ ও কম সময়ে যোগাযোগের জন্য ২০০০ সালে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলার ওপর দিয়ে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নামে এ সড়কটি চালু করা হয়।
সড়কটি চালু হওয়ায় এসব জেলাগুলোতে সড়ক পথে যাতায়াতে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পথ কমে যায়। ২০১৪ সালে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৪০ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় মাত্র ছয় মাস পার না হতেই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে সৃষ্টি হতে থাকে খানাখন্দ। পিচ, সুরকি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায়ই ঘটতে থাকে দুর্ঘটনা। যানজটে আটকা পড়তে হয় দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত।
পরে ২০১৬ সালে সড়কটির আঙ্গারিয়া থেকে আলুর বাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত মেরামতের জন্য তিন কোটি ১৪ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তখনো একই অবস্থার তৈরি হয়। এক দিক দিয়ে মেরামতকাজ শেষ করে যেতে না যেতেই আবার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হতে থাকে। এরপর এ সড়কে আর কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের কোনো অবস্থা নেই।
সড়কটির অবস্থা এতই নাজুক যে বাস ট্রাকতো দূরের কথা রিকশা-ভ্যান বা অটো-টেম্পোও চলাচল করতে পারছে না। সড়কের মাঝখানের মাটি সড়ে গিয়ে বড় বড় গর্ত এবং অনেক স্থানে খালে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলে হেঁটেও চলাচল করা যায় না।
এ বছর প্রথম দিকে সড়কটি আবার মেরামতের জন্য ৩৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়। গত ১৮ ও ২৭ মার্চ ১ ও ২ নং প্যাকেজের কার্যাদেশ দেয়ার পর দায়সাড়াভাবে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখনো ৩নং প্যাকেজের কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। অথচ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই প্যাকেজের আওতাধীন সড়ক।
এ দিকে সড়কের নাজুক অবস্থার কারণে তিনটি ফেরি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। একটি ফেরি দিয়ে কোনো রকম ঘাটটি চালু রাখা হয়েছে। ফেরিটি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একবার যাতায়াত করে। যানবাহন না থাকায় অনেক সময় খালি ফেরিই চলাচল করে। ফলে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি সার্ভিস। এই রুটে প্রতিদিন প্রায় সাত লাখ টাকা রাজস্ব আয় হতো।
শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরিঘাট টার্মিনাল সহকারী ফারুক ইসলাম বলেন, এ রুটে যানবাহন পারাপারে চারটি ফেরি চলতো। সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় তিনটি ফেরি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক সময় একমাত্র ফেরিটিও খালি চলাচল করছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, মহাসড়কটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তবে আশা করি আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে সড়কটি দিয়ে যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হবে। স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হলে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করতে হবে। এজন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement