১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জেসিন্ডা আর্ডের্ন : কেন তাকে নিয়ে গর্বিত হবে না সবাই!

জেসিন্ডা আর্ডের্ন‌।‌‌ - সংগৃহীত

নামটা পরিচিত, বহুলপ্রচারিত নয়। নিজের ঢাক পেটান না। সুন্দর ছিমছাম শান্তিভরা দেশ নিউজিল্যান্ড। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। ক্রাইস্টচার্চের দুই মসজিদে এক ভয়ঙ্কর বর্ণবিদ্বেষী বদমাইশের হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ জন, যারা নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। শুধু ঘটনাস্থলে ছুটেই যাননি প্রধানমন্ত্রী, নিহতদের বাড়িতে গেছেন, প্রার্থনাসভায় পাশে থেকেছেন শোকসন্তপ্ত আত্মীয়স্বজনের পাশে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বার্তা পাঠালেন, ‌‘‌নিউজিল্যান্ডের জন্য আমি কী করতে পারি?‌’‌ জেসিন্ডা আর্ডের্ন উত্তর পাঠালেন সাথে সাথে, ‘‌যারা শোচনীয় হামলায় প্রাণ হারালেন, সেই মানুষদের জন্য, তাদের আত্মীয়স্বজনদের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন!‌’‌

তারপর ১৬ মার্চ জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে জুমার আজান ও নামাজ সম্প্রচারের নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘‌আসুন আমরা সবাই প্রার্থনায় থাকি হৃদয় দিয়ে, বেদনা নিয়ে।’‌

পার্লামেন্টে ভাষণ শুরু করলেন ‘‌সালাম আলাইকুম’ দিয়ে‌। এই প্রথম দেশের পার্লামেন্টে কোরানের অংশ পাঠ করা হলো। এক এমপি ঘটনার নিন্দা করতে গিয়ে ঘৃণ্য খুনির নাম করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করলেন। জেসিন্ডা বললেন, ‘‌ওই শয়তানটার নাম আমরা কেউ করব না। বরং সবাই মিলে তাদের নাম উচ্চারণ করে স্মরণ করব, যারা প্রাণ হারিয়েছেন। প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারব না, কিন্তু প্রতিজ্ঞা করব, এমন আর হতে দেব না।’‌ বললেন, ‘‌যারা এদেশে এসেছেন, নাগরিক হয়েছেন, দেশকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাদের প্রতি কর্তব্য পালনে ব্যর্থ সরকার। আসুন, লজ্জিত হই। শুধু শোক নয়, প্রতিজ্ঞা। বর্ণবিদ্বেষী, সম্প্রদায়বিদ্বেষী দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের, গোটা বিশ্বের। এই লড়াই–‌এর কোনো সীমান্ত নেই।’‌

এমন একজন প্রধানমন্ত্রীও আছেন, ভেবে গর্ব হবে না সব দেশের সুস্থ মানসিকতার মানুষের?‌ বয়স ৩৮। নাম জেসিন্ডা আর্ডের্ন‌।‌‌

জেসিন্ডাকে মুসলিম বালিকার ছোট্ট উপহার

ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলার দুই মসজিদে হামলার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন, তাতে প্রশংসায় ভেসেছে পুরো বিশ্ব। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ছোট্ট মুসলিম বালিকার কাছ থেকে একটি কার্ড উপহার পেয়েছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের নিউজনাউ-এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যানুযায়ী শিশুটি জানিয়েছে, জেসিন্ডা সুন্দরভাবে কথা বলেছেন। তার কথায় মুগ্ধ হয়েই এ কার্ড বানিয়েছে সে। তারপর সেটি উপহার হিসেবে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।


ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, অকল্যান্ডের মসজিদে উমর খুলে দেয়ার পর ফিরে যাওয়ার সময় সাফিয়া বাশার নামের ওই শিশু তাকে হাতে বানানো কার্ডটি উপহার দেয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বসে তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।

পরে এ ব্যাপারে সাফিয়া স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানায়, ওই কার্ডে হাতে আঁকা সুন্দর একটি ছবি রয়েছে। সাফিয়ার পিতা তানের, তার পরিবার ও এলাকাবাসী এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চান। তারা বলেন, আমরা তার মানবতাকে পছন্দ করি। আমরা তার মহান নেতৃত্বকে পছন্দ করি। আমরা তার দয়া ও দায়িত্বের ব্যাপারটি পুরো পৃথিবীকে দেখিয়ে দিতে চাই।

এ কারণে আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি। আমরা এই বার্তাটি তার সাথে শেয়ার করতে চাই এবং তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুরো নিউজিল্যান্ডবাসীকে একত্র হতে সাহায্য করেছেন। এখন আমরা অনুভব করি পুরো নিউজিল্যান্ডবাসী আমরা এক জাতি।


আরো সংবাদ



premium cement