২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ক্রাইস্টচার্চে হত্যাকাণ্ড

২ বছরের সন্তান বাঁচাতে গুলির সামনে বুক পেতে দেন বাবা

- ছবি : সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার সময় বন্দুকধারীর গুলির সামনে দাঁড়িয়ে দুই বছরের ছেলের প্রাণ বাঁচিয়েছেন একজন। ওই ঘটনায় একাধিক বুলেটবিদ্ধ জুলফিকার সিয়াহর অবস্থা গুরুতর, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে তার চিকিৎসা চলছে।

সিয়াহর আমেরিকান স্ত্রী আল্টা মারি বলেছেন, তাদের ছেলে আভেরোস সামান্য আহত, সে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে তার স্বামীর শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় গুলি লেগেছে। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘লিনউড ইসলামিক সেন্টারে হামলার সময় আমার স্বামী আমাদের ছেলেকে আড়াল করেছিলেন। এতে তার বেশির ভাগ গুলি লাগে এবং তিনি আমাদের ছেলের চেয়ে অনেক বেশি আহত হন।’

তাদের ছেলে ছোটখাটো জখম থেকে সুস্থ হয়ে উঠছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তার উন্নতি দারুণ। স্বভাবজাত বেশি কথা বলা ও দুরন্তপনায় সে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের কর্মীদের মাতিয়ে রাখছে।’ মাত্র দুই মাস আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে যায় সিয়াহর পরিবার। সিয়াহকে একজন ‘মেধাবী ও কঠোর পরিশ্রমী আর্টিস্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এই দম্পতির বন্ধু জোদি পুহাল্লা। সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট

আরো দেখুন : হামলাকারীর ভুলে মসজিদে রক্ষা পেয়েছিলেন অসংখ্য মুসল্লি!
নয়া দিগন্ত অনলাইন; ১৮ মার্চ ২০১৯, ১৯:৪৪

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলাকারী ব্যক্তি একজনই। তিনি অস্ট্রেলিয়ান উগ্রবাদী শেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট (২৮) একাই পৃথকভাবে দুটি হামলা চালিয়েছিলেন। হামলার ঘটনায় আটক অন্যদের সম্পৃক্ততা নেই বলে ধারণা করছে পুলিশ।

গত শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা একজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ জনে।


কিন্তু এই হত্যাকান্ড নিয়ে সর্বশেষ যে তথ্যটি সামনে এসেছে তা হল- মসজিদ আল নুর-এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে লিনউড মসজিদে হামলা চালানোর লক্ষ্যে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী ট্যারেন্ট ভুল রাস্তা ধরে এগিয়েছিলেন। আর এই কারণেই বেঁচে যায় আরো কয়েক ডজন মুসল্লির জীবন।

মোহাম্মদ অখিল উদ্দিন লিনউড মসজিদে হামলার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তার ভাষ্য, তিনি কেবল তার গাড়িটি পার্ক করে জুমআর নামাজ পড়তে মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন। এসময় তিনি দেখতে পান, মাথায় হেলমেট ও গ্লাভস পরা হাতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে মসজিদের ঠিক বিপরীত দিকের মূল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদে এসময় জুমআর নামাজ পড়তে প্রায় ১০০ জন মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।

মোহাম্মদ অখিল উদ্দিন বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মসজিদ থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু উল্টোপাশে দাঁড়ানোর কারণে মসজিদে প্রবেশের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিল না সে। মসজিদে প্রবেশের দরজা খুঁজে না পেয়ে সে মসজিদের বাইরে ও জানালায় গুলিবর্ষণ করে। আর এই ঘটনার কারণে সতর্ক হয়ে অধিকাংশ মুসল্লিই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে সক্ষম হয়। যদিও হামলায় ল্রনউড মসজিদের ৭ জন মুসল্লি নিহত হন। কিন্তু হামলাকারী ভুল রাস্তা দিয়ে না আসলে এই সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারতো।

প্রত্যক্ষদর্শী অখিল জানান,‘আমি সবাইকে বললাম-‘নিচু হয়ে যাও। বাইরে কোনো গোলমাল হচ্ছে। আর এরপরই মসজিদের ভিতরের মুসল্লিরা মেঝেতে শুয়ে পড়েছিল’।

‘এরপর আমি সবাইকে মহিলাদের নামাজের স্থানে আশ্রয় নিতে বললাম। কারণ সেটা নিরাপদ স্থান এবং সখানে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়া যায়।’

তিনি বলেন,‘আমরা যেখানে লুকিয়ে ছিলাম, একপর্যায়ে হামলাকারী সেটার ডানদিকে অবস্থান নেয়। এটা ছিল খুব ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি। হামলাকারী মসজিদে প্রবেশের দরজা খুঁজে না পেয়ে জানালা লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। আর এরপরই আমিসহ অন্য সবাই বিভিন্ন দিকে আশ্রয় নিই এবং মসজিদের দরজা আটকে দেয়ার চেষ্টা করি। আর এ কারণেই হয়তো মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের অধিকাংশই বেঁচে যায়। যদি হামলাকারী ভুল পথে না এসে সঠিক রাস্তা দিয়ে এসে মসজিদের প্রবেশ গেইটের সামনে পৌঁছতো, তাহলে হয়তো আমাদের কেউই জীবিত থাকতো না।’

মোহাম্মদ অখিল উদ্দিন একজন ভারতীয় মুসলিম। হামলায় অখিলের স্বদেশী মোহাম্মদ আফরোজ নামে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত আফরোজ মসজিদ আল নুর-এ নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। অখিল বলেন, নিহত আফরোজ তারসহ আরো কয়েকজনের পুরোনো বন্ধু। নিজের পুরোনো বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে এক সপ্তাহ আগে অ্যাশবার্টন শহর থেকে ক্রাইস্টচার্চে এসেছিলেন আফরোজ।

অখিল বলেন,‘আমরা পাঁচজন বন্ধু ছিলাম। হামলার শিকার হয়ে নিরাপদে বাইরে আসতে পেরেছি আমরা তিনজন। এটা বর্ণনাতীত। আমি কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, আমাদের বন্ধুদের কিছু পরিকল্পনা ছিল। হামলার শিকার হওয়ার আগের দিনও আমরা কিভাবে বিয়ে করবো সেটা নিয়ে হাসাহাসি করেছি। আমাদের বন্ধু নিহত মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন, আর আরিব সাঈদ এসেছিলেন পাকিস্তান থেকে।

তিনি বলেন,‘তাদের কক্ষগুলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের ব্যবহৃত ঘড়ি, কম্পিউটার সবকিছুই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তারা আর আমাদের মাঝে নেই। আমি যখন ঘরে যাই, আমি একি সেকেন্ডও সেখানে থাকতে পারি না। কক্ষগুলো খুব শান্ত আর নীরব। ভিতরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ সূত্র : স্টাফ নিউজ।


আরো সংবাদ



premium cement