১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘তাকিয়ে দেখি মসজিদের ভেতর লাশের স্তুপ’

নুর হামজা - ছবি : সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের আল নুর মসজিদ থেকে বেঁচে ফেরা সৌভাগ্যবান মুসুল্লিদের একজন ৫৪ বছর বয়সী নুর হামজা। অন্যান্য শুক্রবারের মতো এদিনও তিনি গিয়েছিলেন ওই মসজিদটিতে জুমার নামাজ পড়তে। কিন্তু এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হতে হবে তা কোনদিন চিন্তাও করেননি। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর হামলায় নিহত হয়েছে ৪৯ জন মুসুল্লি। কিছু ভাগ্যবান কোন মতে পালাতে পেরেছেন মসজিদ থেকে। তাদেরই একজন নুর হামজা।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড পত্রিকাকে হামজা বলেছেন কিভাবে গুলি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর জীবন বাঁচাতে তিনি দৌড়ে বের হয়েছেন মসজিদ থেকে। আরো অনেকের সাথে তিনিও দৌড় দেন মসজিদের দরজা লক্ষ্য করে।

ক্রাইস্টচার্চের ডিনস এভিনিউয়ে অবস্থিত মসজিদটি থেকে বের হয়ে তারা পার্কিংয়ে রাখা গাড়িগুলোর পেছনে লুকিয়ে পড়েন। হামজা বলেন, অন্তত ১৫ মিনিট সময় ধরে গুলি চলছিলো মসজিদের ভেতরে।

কিছুক্ষণ পর আর্মড পুলিশের সদস্যরা মসজিদ ভবনে প্রবেশ করে। কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারী নিরাপদে বেড়িয়ে গেছে। পুলিশ আসার পর হামলা গাড়ির পেছন থেকে বের হয়ে দেখতে পান মসজিদের দরকার কাছে লাশ পড়ে আছে। যারা দৌড়ে বের হয়ে চেয়েছিল তাদের ওপরও গুলি চালিয়েছে সন্ত্রাসী। বের হওয়ার পথেই তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

হামজা বলেন, এরপর জানালা দিয়ে মসজিদের ভেতরে তাকিয়ে দেখলাম লাশের স্তুপ

১৯৮০’র দশকে মালয়েশিয়া থেকে নিউজিল্যান্ডে পড়তে গিয়েছিলেন নুর হামজা। লেখাপড়া শেষ করে ১৯৮৮ সালে সেখানেই স্থায়ী হন। এই ঘটনায় হতবম্ভ এই মুসুল্লি। সংবাদ মাধ্যমের সাথে যখন কথা বলছিলেন, তার পোশাকে লেগে আছে রক্ত। পুলিশ আসার পর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য কাজ করেছেন তিনি।

হামজা বলেন, ‘এটি নিউজিল্যান্ডের জন্য একটি বিপর্যয়। একটি অন্ধকার দিন।’ তিনি বলেন, এমন কিছু ঘটবে তা কখনো চিন্তাও করিনি। কিভাবে কী হলো এখনো তা আমার মাথায় ঢুকছে না।’

হামজা বলেন, আমি মানসিকভাবে যথেষ্ট শক্ত আছি। তবুও চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখার পর আগামি কয়েকটা দিন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতে পারবো না।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ক্রাইস্টচার্চ নগরীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আল নুর মসজিদের কাছে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক জানিয়েছেন, পুলিশের সতর্কতা পাওয়ার পর তারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।

অ্যালেক্স নামে একজন বিবিসিকে বলেন, পুলিশের টহল গাড়ির সাইরেন আর মাথার ওপর হেলিকপ্টার উড়ছে। এরপরই আমরা জানতে পারি এক বন্দুকধারী রয়েছে নগরীতে। আমরা টিভিতে চোখ রাখতে শুরু করি। 

হামলার ঘটনা থেকে অল্পর জন্য বেঁচে গেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। বর্তমানে নিউজিল্যান্ড সফররত দলটি অবস্থান করছে ক্রাইস্টচার্চে। আল নুর মসজিদে তারা নামাজ পড়তে যাওয়ার ৫ মিনিট আগে ঘটে হামলার ঘটনা। ক্রিকেটারদের বাস যখন গিয়ে মসজিদের কাছে থামে- তারা দেখতে পান আহতরা মসজিদ থেকে দৌড়ে বের হয়ে আসছে। দ্রুত তারা হোটেলে ফিরে যান।


আরো সংবাদ



premium cement