২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিয়ে পালানো ইতির গলায় স্বর্ণপদক

মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেন রোমান সানা ও ইতি খাতুন - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইতি খাতুনের বার মনে পড়ছিল আগের সেই কথাগুলো। কোথায় ছিলেন, কোথায় এলেন। অজানা ভবিষ্যতের উদ্দেশেই যাত্রা শুরু করেছিলেন। নিয়তি তাকে আর্চারিতে এনে কতগুলো ভালো মানুষের সহায়তায় দিয়েছে নতুন জীবন। ভাবতেই এখনো গা শিউরে উঠে মেহেরপুরের মেয়ে ইতি খাতুনের।

ইতি খাতুন সৃষ্টি করেছেন নতুন এক ইতিহাস। বাল্য বিবাহ রোধ করে এসএ গেমসের মঞ্চে গলায় পরলেন স্বর্ণপদক। তাও একবার নয়। দুবার করে। আগামীকাল আরো একবার পরতে পারেন। তাহলে বিয়ে থেকে পালানো মেয়েটির রেকর্ড খাতায় লিখা থাকবে হ্যাটট্রিক স্বর্ণজয়ের অধ্যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়ই একদিন আর্চারি দেখে ভালোবেসে ফেলেন এ খেলাটিকে। এতটাই মজে গিয়েছিলেন যে, বাবা-মায়ের বকুনিকেও পরোয়া করেননি। অনুশীলন শেষে একদিন বাড়িতে এসে দেখেন বাবা তাকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। পাত্রপক্ষও উপস্থিত। শাড়ি পরে ঘোমটা মাথায় পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ান ইতি। পাত্রপক্ষের পছন্দও হয়ে যায়।

কিন্তু বিধাতা লিখে রেখেছেন ভিন্ন গল্প। বিয়ের আসর থেকে উঠে আসা মেয়েটি নবম জাতীয় আর্চারিতে জিতেছেন প্রথম পদক। তিরন্দাজ সংসদের হয়ে রিকার্ভ ইভেন্টে জিতেছেন ব্রোাঞ্জ। আর আজ গেমসের আসরে রিকার্ভ দলগততে ও মিক্সড ডাবলসে জিতেন স্বর্ণপদক।

২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে প্রতিভা অন্বেষণে প্রথম হয়েছিলেন ইতি খাতুন। বাবা ইবাদত আলী হোটেল কর্মচারী। মেয়েদের স্কুলের খরচ যোগাতে পারেন না বলে মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল এটি জাতীয় মিটে ব্রোঞ্জ পাওয়ার পরই বুঝতে পেরেছেন। আর্চারিতে যোগ দেয়ার কারণে ক্লাব ও ফেডারেশন কিছু আর্থিক সাহায্য করেছে।

পদক জয়ের পর ইতি সেই দুঃখের কথাগুলো বলেন, ‘বাবা বলতেন, তোদের দিয়ে কিছু হবে না। আমাকে খেলতে নিষেধ করতো। পড়াশোনাও করতে দিতো না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে ছিল লেখাপড়া করার। পরে কিভাবে যেন সবকিছু হয়ে গেল। আগের কথা আর মনে করতে চাই না। আমি চাই এগিয়ে যেতে। কোনো মেয়েই যেন মা-বাবার বোঝা না হয়।’

‘আগে বাড়িতে দুবেলা ঠিকমতো খেতে পেতাম না। আর্চারিতে এসে ভিন্ন একটা জীবন উপভোগ করছি। সোনার পদকের মঞ্চে আসতে পারবো, এটি কোনোদিন ভাবিনি। এই পদক আমার আগ্রহ বাড়িয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আরো পদক এনে দিতে পারবো’, বলেন তিনি।

এসএ গেমসের অষ্টম দিনে রিকার্ভ মেয়েদের দলগত ইভেন্টে শ্রীলঙ্কার মেয়েদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছে ৬-০ সেট পয়েন্টে। বিউটি রায়, মেহনাজ আক্তার মুনিরা ও ইতি খাতুন ৫১-৪৭, ৫৩-৪৮ ও ৫৫-৫২ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কার থিসারি মাদুশিখা, রেহানা তায়াবালি ও মাইসা দিলহানিকে পরাজিত করেন।

দুপুরে মিশ্র দলগত ইভেন্টে সোনা জিতেন রোমান সানা ও ইতি খাতুন। তারা ৬-২ সেট পয়েন্ট ও ৩-১ সেটে উড়িয়ে দেন ভুটানের সোনাম দেমা ও কিনলে শেরিংকে।


আরো সংবাদ



premium cement