২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

এমন অনুভূতি কিভাবে বুঝাবো !

- ছবি : নয়া দিগন্ত

আগে তো কখনো এমন হয়নি। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। গলায় মেডেল ঝুলিয়েছি। অতিথিদের সাথে করমর্দন করেছি। কেউ কেউ অর্থ পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত তো পুরস্কারের সময় কখনো বাজেনি। বিদেশের মাটিতে জাতীয় সঙ্গীত যে কিভাবে ভিতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে তা বুঝানো মুসকিল। এ অনুভুতি প্রকাশ করার মতো নয়। বলে বঝুানোর মতো নয়। আপনাদেরকে এই অনুভুতি কিভাবে বুঝাবো !!!

কথাগুলো কারাতে ডিসিপ্লিনে তিন স্বর্ণজয়ী কারাতে খেলোয়াড় আল আমিন, হুমায়রা আক্তার অন্তরা ও মারজান আক্তার প্রিয়ার। পোডিয়ামে পুরস্কার নেয়ার সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজার সাথে সাথে কেমন লেগেছিল তাই জানিয়েছেন তিন স্বর্ণজয়ীরা।

পিয়া

ফাইনালে এক প্রকার মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন মারজান। নভেম্বরে ঢাকায় সাফ কারাতে চ্যাম্পিয়নশীপে নেপালের আনুংয়ের কাছে হেরে স্বর্ণ হাতছাড়া হয়েছিল। এবার তাকে হারিয়েই স্বর্ণ জয় করেছেন এই তরুণী। আল আমিনের স্বর্ণ জয়ই আতœবিশ্বাসী করেছে মারজান আক্তার প্রিয়াকে, ‘আমরা এখানে যারা এসেছি সবাই দেশে যার যার ইভেন্টে সেরা। একটু ভুলের জন্য কাল ( সোমবার) হাসান খান সান ও হুমায়রা স্বর্ণ মিস করেছিল। আজ ( মঙ্গলবার ) যখন সকালে একটি স্বর্ণ আসলো। তখন আমার আতœবিশ্বাস বেড়ে গেছে। মনে হয়েছে একটু চেষ্টা করলেই আমিও জিততে পারব। আত্ববিশ্বাসের সাথে খেলায় শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। ’

ফেনীর দাগনভূঁইয়ার এই কন্যা বেড়ে উঠেছেন ঢাকার শান্তিনগরে। ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজে পড়াবস্থাতেই খেলাধূলার দিকে ঝোক হয়। শুরুর দিকে অ্যাথলেটিক্সে থাকলেও পরে কারাতেতে মনোযোগী হন। ২০১৬ সাল থেকে কারাতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে এই ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন। প্রিয়ার বাবা পুলিশের এসআই মা নুরজাহান গৃহিণী। কাঠমান্ডু আসার পূর্ব পর্যন্ত পরিবারের খুব বেশি সহযোগিতা পাননি। এটাও তাকে ভালো করার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার কথায়, ‘বাবা-মা মাঝে মধ্যে অনেক বকাঝকা করত। সেই বকাকে আমি জিদ হিসেবে নিয়েই এত দূর আনতে সক্ষম হয়েছি।’

বাবা-মা’র বকাঝকা একেবারে অমূলক নয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় স্কুল-কলেজের পর তাদের মেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ¯œাতক পড়ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমর্থন পেয়েছেন পিয়া,‘ শিক্ষকরা ছুটি দেয়ার সময় বলছিলেন,‘ যাও, পদক নিয়ে এসো’। চারুকলায় পড়াশোনা করলেও খেলাধূলায় ক্যারিয়ার গড়তে চান এই স্বর্ণজয়ী।

অন্তরা

গেমসের দ্বিতীয় দিনে ব্রোঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পদক এনেছিলেন হুমায়রা আক্তার অন্তরা। একটুর জন্য লড়তে পারেননি স্বর্ণের লড়াই। সেই অন্তরা কুমি ইভেন্টে অনূর্ধ্ব ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে ৪-৩ পয়েন্টে পাকিস্তানের কাউসার সানাকে হারিয়ে স্বর্ণ জয়ের আনন্দে মাতেন। স্বর্ণ নিশ্চিত হওয়ার পর একটু হাফ ছেড়ে বাচলেন, ‘গত দুই রাত একদম ঘুমাতে পারিনি। খুব স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম স্বর্ণ জয়ের। সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় এখন তৃপ্ত। ’

স্বর্ণজয় নিশ্চিত হওয়ার তাৎক্ষণিক অনুভূতি কেমন ছিল তা ব্যক্ত করলেন, ‘আমি নিজে জিতেছি এটা ভাবিনি। আমার দেশ একটি স্বর্ণ পেল। আমার দেশের পতাকা উচুতে উঠল এটা ভেবেই চোখে পানি এসেছে।’

অন্তরা তার সাফল্যের পেছনে কোচদের বেশি অবদান দিলেন, ‘কোচরা আমাদের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছে। আমরা অনেক বিষয় বুঝিনি। তারা কষ্ট করে কৌশল শিখিয়েছে। কোচরা আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিল। সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে পেরে ভালো লাগছে।’ 

কোচদের পাশাপাশি আতœত্যাগ রয়েছে অন্তরারও। কারাতের ক্যাম্পের জন্য তিনি মেডিকেল ও ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেননি, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। দেশের সম্মানের জন্য আমি আমার স্বপ্ন বিসর্জন দেয়েছি। এখন আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করার সুযোগ দেয়া হলে কৃতজ্ঞ থাকবো।’

আল আমিন

পুরুষ একক অনূর্ধ্ব-৬০ কেজি ওজন শ্রেনীতে ৭-৩ পয়েন্টে পাকিস্তানের জাফরকে হারিয়ে দিনের প্রথম স্বর্ণপদক জিতে নেন আল আমিন। এর আগে সেমিফাইনালে স্বাগতিক নেপালের প্রতিযোগিকে ৭-৫ পয়েন্টে হারান।

সোমবার রাতে বিশেষ অনুশীলন করেছিলেন আল আমিন। ফাইনালে তার কোচের কৌশল বড় ভূমিকা ছিল মনে করেন তিনি, ‘কোচ পাকিস্তানের প্রতিযোগীর কিছু মুভমেন্টের ব্যাপারে বলেছিলেন। কৌশলও বলে দিয়েছিলেন। সেটা অনুসরণ করলাম। কোচ আরও বলেছিলেন দেখো দেশের মান সম্মানটা যেন রক্ষা করতে পারো। আমি পেরেছি।’

তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের স্বর্ণের সূচনাকারী আল আমিনের প্রতিক্রিয়া, ‘এই আবেগ আসলে বোঝানোর মত নয়। দেশের জন্য আমি কিছু নিয়ে আসতে পেরেছি, বিদেশের মাটিতে দেশের পতাকা তুলে ধরতে পারছি, এজন্য গর্ব লাগছে।’

কিতামারু তিৎসুয়া

বাংলাদেশের কারাতের সঙ্গে ১৯৮৪ সাল থেকে আছেন জাপানী কোচ কিতামারু তিৎসুয়া। জাইকার প্রজেক্টে তিনি বাংলাদেশের কারাতে নিয়ে কাজ করতে আসেন প্রায়ই। সর্বশেষ এসেছেন গেমসের আগে। বাংলাদেশের কারাতে সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘বাংলাদেশের কারাতে সুনির্দিষ্ট অবস্থানে থাকতে পারছে না। কখনো খুব উচুতে আবার কখনো নিচুতে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি ভালোই ছিল। ভারত থাকলেও সমস্যা হতো না। মূল প্রতিপক্ষ স্বাগতিক নেপালের সাথে লড়াই করেই বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতছে।’


আরো সংবাদ



premium cement