১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

এশিয়ার এই দেশে কেন একটি সংক্রমণও ধরা পড়েনি?

- ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের মহামারিতে ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে বিশ্ব, রক্ষা পাচ্ছে না কোন দেশ। কোভিড-১৯-এর যে বিশ্ব মানচিত্র, তাতে লাল বৃত্তের চিহ্ণ পড়ছে একের পর দেশে।

কিন্তু এই ভয়ংকর সময়ে একটি দেশ দাবি করে চলেছে, তাদের নাকি করোনাভাইরাসের একটা সংক্রমণও ধরা পড়েনি। দেশটির নাম তুর্কমেনিস্তান। বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়ক রাষ্ট্রগুলোর একটি।

বিশেষজ্ঞদের আশংকা, সরকার সত্য গোপন করছে। করোনাভাইরাসের মহামারি প্রতিরোধের চেষ্টায় এর ফলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটতে পারে।

করোনাভাইরাস ঠেকাতে অন্যান্য দেশ যখন সবকিছু নিষিদ্ধ করে লকডাউন জারি করছে, তখন তুর্কমেনিস্তানে ৭ এপ্রিল, মঙ্গলবার ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ উদযাপনের জন্য গণ সাইকেল র‍্যালির আয়োজন করা হয়েছিল।

মধ্য এশিয়ার এই দেশটি দাবি করছে, করোনাভাইরাসের একটি ঘটনাও ধরা পড়েনি সেখানে। কিন্তু যে দেশটির এত কুখ্যাতি সেন্সরশীপের জন্য, সে দেশের সরকারকে কতটা বিশ্বাস করা যায়?

লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক মার্টিন ম্যাককি বলেন, “তুর্কমেনিস্তানের সরকার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেসব তথ্য প্রকাশ করে, সেগুলোর একেবারেই বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।”

অধ্যাপক ম্যাককি তুর্কমেনিস্তানের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন।

“গত এক দশক ধরে ওরা দাবি করে যাচ্ছে সেদেশে নাকি কোন এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মানুষ নেই। এটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমরা এটাও ভালো করেই জানি এই শতকের প্রথম দশকে সেদেশে প্লেগ থেকে শুরু করে অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।”

কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়তো এরই মধ্যে তুর্কমেনিস্তানে ঘটে গেছে, কিন্তু ভয়ে দেশটির কোন মানুষ সেরকম ইঙ্গিত পর্যন্ত দিতে নারাজ।

‍“আমার পরিচিত একজন, যিনি একটি সরকারি সংস্থায় কাজ করেন, তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেছেন, এই ভাইরাস এখানে আছে বা আমি শুনেছি ভাইরাসটি পাওয়া গেছে, এরকম কথা পর্যন্ত আমার বলা উচিৎ নয়। কারণ এতে আমার বিপদ হতে পারে”, বলছেন রাজধানী আশগাবাটের একজন বাসিন্দা, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চান না।।

তবে তুর্কমেনিস্তানের কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে তারা একটি পরিকল্পনাও তৈরি করছেন।

তুর্কমেনিস্তানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক এলেনা পানোভা বলেন, এই পরিকল্পনায় দেশটির সব পর্যায়ে সমন্বয়, ঝুঁকি সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করা, প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা- সব ব্যবস্থার কথাই আছে।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছিল, তুর্কমেনিস্তানে কোন কোভিড-১৯ সংক্রমণ হয়নি বলে সরকার যে দাবি করছে, সেটা তারা কতটা বিশ্বাস করেন। কিন্তু এলেনা পানোভা এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেননি।

“আমরা সরকারের দেয়া তথ্যের ওপরই নির্ভর করি। কারণ সব দেশ এভাবেই তথ্য দেয়। এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোন ব্যাপার নেই, কারণ এভাবেই পুরো বিষয়টি কাজ করে।”

এলেনা পানোভা বলেন, মানুষের চলাফেরা সীমাবদ্ধ রাখার জন্য শুরুতে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তার ফলেই হয়তো এখানে কোন সংক্রমণ এখনো পাওয়া যায়নি।

এটা সত্যি, তুর্কমেনিস্তান প্রায় এক মাস আগে তাদের স্থল সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল।

ফেব্রুয়ারীর শুরুতে চীন এবং অন্য কিছু দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলও বন্ধ করে দেয়। সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণের জন্য রাজধানীর পরিবর্তে পাঠিয়ে দেয়া হয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর তুর্কমেনাবাটে। সেখানে একটি কোয়ারেনটিন জোনও তৈরি করা হয়।

তবে কিছু মানুষের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেকে ঘুষ দিয়ে এই কোয়ারেনটিন জোন থেকে আগেই বেরিয়ে যান।

এলেনা পানোভা বলেন, যারা বিদেশ থেকে এসেছে এবং যাদের করোনাভাইরাসের লক্ষণ ছিল, তাদের সবাইকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তিনি বলত পারেননি কত মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তাদের কাছে কত টেস্টিং কিট আছে।

“সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বুঝতে পারি তাদের কাছে যথেষ্ট টেস্টিং কিট আছে।”

কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যদি ছড়িয়ে পড়ে, তার জন্য কতটা প্রস্তুত দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

“আমরা জানি না”, বলছেন তিনি। “আমাদের বলা হয়েছে তাদের একটা প্রস্তুতি আছে। আমরা তাদের কথাকে অবিশ্বাস করছি না। এখানকার হাসপাতালগুলো বেশ সুসজ্জিত‍। তবে যদি একটা মহামারি শুরু হয় অন্য যে কোন দেশের মতো এখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও চাপের মুখে পড়বে। কাজেই যত প্রস্তুতিই থাক, সেটা পর্যাপ্ত নয়। সেজন্যে আমরা এখনি তাদের ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে বলছি।”

তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুরবাঙ্গুলি বেরডিমুখাআমেডভের নির্দেশ মেনে সব অফিস-আদালত-বাজারে একটি ভেষজ উপাদান ছড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের ধারণা এই ভেষজ উপাদান ভাইরাস দমনে সাহায্য করবে। যদিও এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই।

কিন্তু বাকী বিশ্বে যখন সব অচল হয়ে পড়েছে, তখন তুর্কমেনিস্তানে জীবন চলছে স্বাভাবিক গতিতে। দোকানপাট, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট- সব খোলা। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছে মানুষ। কেউ মুখে মাস্ক পড়ছে না।

বড় বড় জনসমাগম হয় এমন ধরণের অনুষ্ঠানও চলছে। মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসের মারাত্মক হুমকিকে এই দেশ অস্বীকার করে চলেছে। বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement