২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাখাইনে বিদ্রোহীদের হাতে সু চির দলের নেতা নিহত

- সংগৃহীত

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) শীর্ষ এক নেতাকে অপহরণের পর হত্যা করেছে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। কয়েক দিন আগে রাখাইনের বুথিডং শাখা এনএলডির এই নেতাকে অপহরণ করেছিল বিদ্রোহীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, অং সান সু চির রাজনৈতিক দলের এক কর্মকর্তা রাখাইন প্রদেশে নিহত হয়েছেন।

নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে দায়রকৃত মামলায় মিয়ানমারের পক্ষে লড়ায় রাখাইনে সু চির সমর্থনে সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলেন ওই নেতা। তার মারা যাওয়ার কথা সরকারি পর্যায় থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। তবে রাখাইনে মিয়ানমার সরকার তার নিয়ন্ত্রণ ক্রমাগত হারাচ্ছে বলেই ইঙ্গিত দেয় এই ঘটনা। ওই রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে জাতিনিধনের মুখে জীবন বাঁচাতে কমপক্ষে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশে।

ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) রাখাইনের বুথিডং শাখার চেয়ারম্যান ছিলেন নিহত ইয়ে থেইন। রাখাইনের অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে লড়াইরত জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধ বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান আর্মি প্রায় এক সপ্তাহ আগে এনএলডির এই নেতাকে অপহরণ করে। আরাকান আর্মির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনএলডির নেতা থেইন গত সোমবার নিহত হয়েছেন। বড় ধরনের বিস্ফোরণের কারণে কিছু বন্দী মারা গেছেন এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। এনএলডির বুথিডং শাখার চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন।

এনএলডির মুখপাত্র মিও নিন্ট বলেছেন, আমরা এনএলডির সদস্যরা তাকে হারিয়ে অত্যন্ত শোকাহত। সু চির সমর্থনে সমাবেশের পরিকল্পনা করাটা সঠিক ছিল এবং এটা কোনো ধরনের অপরাধ নয়। সম্প্রতি রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের বিরুদ্ধে সিরিজ হামলা ও দুঃসাহসিক অপহরণ, বোমা বিস্ফোরণ এবং রক্তাক্ত অভিযান পরিচালনা করেছে আরাকান আর্মি। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের দমনে নতুন করে অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন এবং গুমের অভিযোগ করেছে। মিয়ানমারের পঞ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যে প্রায়ই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে সেনাবাহিনীর সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ার খবর আসছে। ২০১৭ সালের আগস্টে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের জেরে সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।

এক বছর আগে সেনাবাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ জোরালো হয়। তখন থেকে এখন পর্যন্ত রাখাইনে লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বিদ্রোহীদের সশস্ত্র এই সংগঠন জাতিগত বৌদ্ধ রাখাইন সম্প্রদায়ের। তারা রাখাইনের অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে সংঘর্ষ চলছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আরাকান আর্মির বেশির ভাগ সদস্যই বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর। তারা অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মিয়ানমারে যেসব বিদ্রোহী জাতিগত গ্রুপ আছে তার অন্যতম আরাকান আর্মি। তবে হেগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা মামলায় তারা সমর্থন করে। ওই মামলায় মিয়ানমারের সামরিক শক্তির পক্ষ নিয়ে হেগের আদালতে আসামির কাঠগড়ায় ব্যক্তিগতভাবে দাঁড়িয়েছিলেন অং সান সুচি। তবে এনএলডির স্থানীয় ওই চেয়ারম্যানের মৃত্যুর বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি। সূত্র : রয়টার্স।


আরো সংবাদ



premium cement