২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উইঘুর মুসলিম নির্যাতন : চীনকে শাস্তি দিতে আমেরিকায় বিল পাস

শিনজিয়াংয়ের হোতান শহরে কয়েকজন উইঘুর মুসলিম - ছবি : বিবিসি

চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের বিনাবিচারে বন্দী করে রাখা, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো ও হয়রানি করার কারণে চীনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়ে একটি বিল পাস করেছে আমেরিকা।

চীনকে টার্গেট করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এরকম দুটো বিল পাস হলো।

ক’দিন আগে হংকংয়ে চীন বিরোধী বিক্ষোভের সমর্থনে একটি আইন পাস করা হয়, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে হংকংয়ে কোনো মার্কিন সামরিক জাহাজ এবং ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে।

উইঘুরদের নিয়ে নতুন আরেকটি আইন পাসের উদ্যোগে ক্ষিপ্ত বেইজিং বলেছে, আমেরিকা চীনের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে সরাসরি নাক গলাচ্ছে।

মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে মঙ্গলবার রাতে বিলটি উত্থাপন করা হলে এর পক্ষে ৪০৭টি ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়েছে মাত্র একটি ভোট।

চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিলটি এখন সিনেটে যাবে। তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সই করলে সেটি আইনে পরিণত হবে।

বিলটিতে শিনজিয়াং-এ কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি চেন কোয়াংগোসহ চীন সরকারের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলা হয়েছে।

চেন কোয়াংগোকে এসব বন্দী শিবিরের পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হয়।

বিলটিতে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তারা পরিকল্পিতভাবে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদেরকে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। সেইসাথে লঙ্ঘন করছে তাদের মত প্রকাশ, ধর্ম পালন, মুক্তভাবে চলাফেরা এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার স্বাধীনতাও।

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা ন্যান্সি প্যালোসি বলেন, এই বিলের মাধ্যমে তারা বেইজিংকে একটি বার্তা দিচ্ছেন।

‘আমরা চীনকে বলছি যে, আমেরিকা এসব কিছুর ওপর নজর রাখছে এবং তারা চুপ করে থাকবেন না। এই বিলটিতে সত্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে চীনের এসব কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।’

বিলটিতে এসব ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে তিনি যাতে উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান।

হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের সমর্থন দিয়ে একটি বিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বাক্ষর করার কয়েকদিন পরেই চীনে সংখ্যালঘু উইঘুরদের মানবাধিকার সংক্রান্ত এই বিলটি পাস হলো।

চীনের প্রতিক্রিয়া
সবশেষ এই বিলটির পর চীন বলছে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের কর্মসূচিকে অপবাদ দেয়া হচ্ছে।

সরকারের একজন মুখপাত্র হুঁশিয়ারির সুরে বলেছেন, চীনের স্বার্থকে যারা খাটো করে দেখবে তাদেরকে এর মূল্য দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-বিরোধী’ এই কর্মসূচির কারণে শিনজিয়াং প্রদেশে গত তিন বছরে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।

বিবিসির চীন বিষয়ক সংবাদদাতা জন সাডওয়ার্থ বলছেন, সিনেট ও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পাওয়ার পর বিলটি যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে উইঘুর মুসলিমদের বন্দী করে রাখায় চীনের ওপর এটাই হবে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক চাপ।

এর আগে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক দল তাদের অনুসন্ধানে দেখেছেন যে, বেশ কয়েকটি বন্দীশিবিরে ১০ লাখের মতো উইঘুর মুসলিমকে বন্দীশিবিরে বিনাবিচারে আটকে রাখা হয়েছে।

কিন্তু চীন সরকারের দাবি যে, ধর্মীয় চরমপন্থা ঠেকাতে তারা বৈধভাবেই এসব মুসলিমকে বৃত্তিমূলক কিছু প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement