১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাপানের সম্রাটের যে তিন সম্পদ কেউ দেখতে পায় না

- ছবি : সংগৃহীত

জাপানের সম্রাট নারুহিতো আজ এক জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহ্যমণ্ডিত অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে জাপানের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন।

তার পিতা সাবেক সম্রাট আকিহিতো স্বাস্থ্যগত কারণে সিংহাসন ত্যাগ করার পর এ বছর মে মাস থেকেই ৫৯ বছর বয়স্ক সম্রাট নারুহিতোর শাসনকাল শুরু হয়েছিল, তবে মঙ্গলবার তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক হলো।

টোকিও রাজপ্রাসাদে এই অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস সহ কয়েকশ বিদেশী অতিথি উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ছয় মিটার উঁচু তাকামিকুরা সিংহাসনে বসা সম্রাট নারুহিতোর পোশাক ছিল হলুদ ও কমলা রঙের।

তার স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মাসাকো ১২ স্তরের কাপড়ের তৈরি একটি পোশাক পরেন। তিনি বসা ছিলেন অপেক্ষাকৃত ছোট আরেকটি সিংহাসনে।

সম্রাট তার সিংহাসনে আরোহনের ঘোষণা পাঠ করার পর প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি বার্তা পড়েন, এবং 'সম্রাট দীর্ঘজীবী হোন' বলে হাঁক দেন।

১৯৯০ সালের পর এই প্রথম জাপানের সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠান হলো। তবে সাম্প্রতিক ঘুর্ণিঝড়ে নিহতদের সম্মান দেখাতে রাস্তায় রাজকীয় শোভাযাত্রার কর্মসূচি বাদ দেয়া হয়। শিন্টো ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী এই সিংহাসনে আরোহণের অনুষ্ঠানগুলো হয়।

সম্রাটের তিন সম্পদ: আয়না, তলোয়ার ও মূল্যবান পাথর

এর কেন্দ্রস্থলে আছে জাপানের সম্রাটের তিনটি সম্পদ। অতি প্রাচীন তিনটি রাজকীয় সামগ্রী, যা রাজকীয় ক্ষমতার প্রতীক। এগুলো হচ্ছে একটি আয়না, একটি তলোয়ার এবং একটি মূল্যবান পাথর। প্রাচীন তলোয়ার এবং রত্ন অভিষেক অনুষ্ঠানে রাখা ছিল, তবে তা দেখানো হয় না।

রহস্য ও গোপনীয়তা
এই তিনটি রহস্যময় বস্তু কীভাবে জাপানের সম্রাটের রাজকীয় ঐশ্বর্যের মর্যাদা পেলো - সেই ইতিহাস কঠোর গোপনীয়তায় ঘেরা।

শিন্টো ধর্মমতে অতীত এবং মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী অশরীরী আত্মার সাথে সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিনটি রাজকীয় সম্পদ এরই একটা অংশ মনে করা হয় জাপানের সম্রাটরা ঈশ্বরের বংশধর এবং দেবতারাই এগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছেন।

এগুলো এতই পবিত্র যে জাপানের বিভিন্ন মন্দিরে সর্বদা লোকচক্ষুর অন্তরালে এসব রাখা হয়।

"এগুলো কখন তৈরি হয়েছিল তা কেউ জানে না, এমনকি সম্রাটও কখনো এগুলো দেখেন নি" - বলেন জাপানের নাগোইয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিদেয়া কাওয়ানিশি।

সম্রাট নারুহিতোর অভিষেকেও এগুলো দেখা যায়নি, পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় তার অবিকল নকল। এমনকি সেই নকল সামগ্রীগুলোও কেউ দেখতে পায় না।

পবিত্র আয়না 'ইয়াতা নো কাগামি'
মনে করা হয় এই আয়না এক হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো, এবং এটি রাখা হয়েছে ইসে জিঙ্গু মন্দিরে। সম্রাটের রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মূল্যবান।

জাপানী উপকথায় বলা হয়, আয়নার স্বর্গীয় ক্ষমতা আছে এবং তা সত্য প্রকাশ করতে পারে। জাপানের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী ইয়াতা নো কাগামি নামের এই আয়না তৈরি করেছিলেন দেবতা ইশিকোরিদোম। এর সাথে জড়িয়ে আছে সূর্যের দেবী আমাতেরাসুর নাম।

কুসানাগি নোৎসুরুগি: পবিত্র তলোয়ার
এর অর্থ হচ্ছে 'ঘাস কাটা তলোয়ার' এবং সম্ভবত এটা রাখা আছে নাগোইয়ার আৎসুতা মন্দিরে। একে ঘিরে কাহিনি রয়েছে যে আটটি মাথাওয়ালা এক মানুষখেকো সাপের লেজে এই তলোয়ার ছিল।

সমুদ্র ও ঝড়ের দেবতা সুসানু ওই সাপকে কৌশলে মদ্যপান করিয়ে মাতাল করে তাকে হত্যা করেন, এবং তার লেজ কেটে ভেতর থেকে ওই তরবারি বের করেন।

গুজব রয়েছে আসল তলোয়ারটি দ্বাদশ শতাব্দীতে এক যুদ্ধের সময় সমুদ্রে পড়ে হারিয়ে গেছে।

ইতিহাসবিদরা বলেন, এখন যেটি আছে তা নকল। তারও একটি নকল রাজার অভিষেকে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮৯ সালে সম্রাট আকিহিতোকে একটি বাক্সে করে এই তলোয়ার দেয়া হয়েছিল বলে জানা যায়, কিন্তু তা কখনো খোলা হয়নি।

ইয়াসাকানি নো মাগাতামা : পবিত্র রত্ন
মাগাতামা হচ্ছে এক রকম খোদাইয়ের কাজ করা ছিদ্রবিশিষ্ট পাথর- যা দিয়ে মালা বানানো যায়। খ্রীষ্টপূর্ব ১০০ সাল থেকে জাপানে এরকম পাথর তৈরি হতো।

বলা হয়, ইয়াসাকানি নো মাগাতামা হচ্ছে এমন একটি নেকলেসের অংশ যা দেবী আমে-নো-উজুমের জন্য বানিয়েছিলেন তামানুয়া-নো-মিকোতো।

বলা হয় এটি সবুজ জেড পাথরের তৈরি, এবং রাজকীয় ধনরত্নের মধ্যে এটিই একমাত্র -যার আসলটিই এখনো টিকে আছে। এটি রাখা আছে টোকিওর রাজকীয় প্রাসাদে।

জাপানের সম্রাটরা আমাতেরাসুর বংশধর বলে মানা হলেও, তারা এখন নিজেদেরকে দেবতা বলে দাবি করেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর জাপানের সম্রাট হিরোহিতো তার দেবতার মর্যাদা ত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক কাওয়ানিশি বলেন, জাপানের কিছু লোক এখনো মনে করেন যে সম্রাটের এই তিনটি জিনিসের স্বর্গীয় শক্তি আছে, তবে অন্য অনেকেই এগুলোকে রাজকীয় অলংকার বলেই মনে করেন।

এগুলোর গুরুত্ব এখানেই যে তারা সম্রাটের মহিমার সাথে সম্পর্কিত এবং এ পরিবারের প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক।


আরো সংবাদ



premium cement